মেট্রোরেলের কারণে আবাসন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে মিরপুরে
২০২১ সালে পল্লবী এলাকায় নোভা হোল্ডিংসের একটি ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫,০০০ টাকায় কিনেছিলেন সুফিয়া বেগম। এর ঠিক দেড় বছর পর যখন এক আত্মীয়কে তিনি পল্লবীতে একই রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেওয়ার পরামর্শ দেন, তখন প্রতি বর্গফুটের জন্য সাড়ে ৭,০০০ করে টাকা চায় ওই কোম্পানি। এত অল্প সময়ে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হল মেট্রোরেল চালু হয়েছে সেখানে; ফলে চাহিদা বাড়ায় বেড়ে গেছে অ্যাপার্টমেন্টের দামও।
সুফিয়া বেগম বলেন, "আমি সত্যিই অবাক হয়েছি; দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বর্গফুট প্রতি দুই হাজার টাকা দাম বেড়েছে।"
অনলাইন প্রপার্টি মার্কেটপ্লেস বিপ্রপার্টির তথ্য অনুসারে, মিরপুরে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা ২৭ শতাংশ বেড়েছে; আর দাম দাম বেড়েছে গড়ে ৮.৬ শতাংশ। মূলত মেট্রোরেল চালু হওয়ার কারণে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আগের তুলনায় সহজ হওয়ায় সেখানে এখন বসতি স্থাপনের চাহিদা বেড়েছে।
এছাড়া অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো বলছে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা ঠিক রাখতে অ্যাপার্টমেন্টের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
বিপ্রপার্টির ডেপুটি ম্যানেজার ইয়ামাদ ফায়েদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে ঢাকার মধ্যে মিরপুরে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
নোভা হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলামের মতে, প্রধানত নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি এবং মেট্রোরেল চালু হওয়ার কারণেই অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে।
"একটি বিল্ডিংয়ের জন্য দুইশোরও বেশি ধরনের উপকরণ সামগ্রীর প্রয়োজন হয়; সবকিছুর দামই বেড়েছে। তাই আমাদের কাছে ১০ শতাংশের মতো দাম বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না," ব্যাখ্যা করেন তিনি।
এরই মধ্যে মেট্রোরেল চালু হওয়ার ফলে মিরপুর এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, সেখানকার বেশিরভাগ প্রকল্পই বিক্রি হয়ে যায়, যা দাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইস্টার্ন হাউজিং-এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান বলেন, নগরীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম কম হওয়ায় মিরপুর অনেকদিন ধরেই সাধারণ মানুষের জন্য পছন্দনীয় এবং চাহিদাপূর্ণ একটি এলাকা। এখানকার পশ এলাকা হিসেবে পল্লবীর আবির্ভাব, মিরপুরে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওপর মেট্রোরেল চালু হওয়ায় চাহিদা আগের তুলনায় হয়েছে আরও বেশি।
তিনি বলেন, এসব কারণে মিরপুরে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা অন্তত ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সমস্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব; এই এলাকায় চলমান রয়েছে এমন প্রকল্পসহ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে। অনেক সংস্থার কাছেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের মতো যথেষ্ট প্রজেক্ট রয়েছে। তবে চাহিদা এবং দাম বাড়ার কারণে এগুলো সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নাও থাকতে পারে।
কিন্তু সে অনুযায়ী জমির চাহিদা বাড়েনি বলে এক প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন নোভা হোল্ডিংসের শহিদুল।
"এর কারণ হল, নতুন ড্যাপ পরিকল্পনায় (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান) পাঁচ তলার চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা এই এলাকায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে জমির চাহিদা কমেছে এবং দাম বেড়েছে অ্যাপার্টমেন্টের," ব্যাখ্যা করেন তিনি।
অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব মিরপুরের ভাড়ার বাসাতেও পড়েছে। নবনির্মিত বাড়ির মালিকরা এখন উচ্চ নির্মাণ ব্যয় এবং এলাকায় আবাসনের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বেশি ভাড়া চাচ্ছেন।
অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভাড়ার বাসার ক্ষেত্রে সবদিক দিয়ে মিরপুরের উন্নতি হলেও, এখন অনেকের পক্ষেই এ এলাকায় বাড়ি ভাড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেক রিয়েল এস্টেট প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধিতে অনেকেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পড়েছেন কঠিন পরিস্থিতিতে। মিরপুরের রিয়েল এস্টেট বাজারে মেট্রোরেলের সামগ্রিক প্রভাব ইতিবাচক; তবে এই এলাকায় সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও এখন সামনে আসতে শুরু করেছে।