অবসর জীবন আয়েশে কাটাতে সঞ্চয় করা উচিত কমপক্ষে ৩ মিলিয়ন ডলার
অবসর জীবন একটু আয়েশে কাটানোর জন্য কত টাকা হলেই চলে? অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বেশ কঠিন একটি প্রশ্ন।
তবে উত্তরটা হলো, তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার হলেই অবসরে অর্থকষ্ট নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সম্প্রতি এমলআইভি পালসের জরিপে এমন অংকের পক্ষেই রায় দিয়েছেন বিশ্বের ৫৫৩ জন বিনিয়োগকারী।
এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগকারী মনে করেন, অবসরের জন্য লাখ ত্রিশেক ডলার জমাতে পারলেই ঢের। অন্যদিকে মোটামুটি আরও এক-তৃতীয়াংশের মতে, ৫০ লাখ ডলার সঞ্চয় করলেই একদম নিশ্চিন্ত।
জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগের বিশ্বাস, ২০২২-এর তুলনায় ২০২৩ সালের শেষে তারা অবসর জীবনের জন্য আগের বছরের চেয়ে বেশি অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন।
তবে এসব বিনিয়োগকারীরা অবশ্য নিশ্চিত নন, অবসরে এখনকার মতো আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করার জন্য তারা যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন কি-না। অর্ধেকেরও কম বিনিয়োগকারী এমনটা হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা দেখছেন।
'অনেক ভাবী অবসর জীবনযাপনকারী তাদের সঞ্চিত অর্থের টেকসই হওয়ার বিষয়টি নিয়ে যে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই,' বলেন মর্নিংস্টার-এর ব্যক্তিগত অর্থনীতি ও অবসর পরিকল্পনার পরিচালক ক্রিস্টিন বেঞ্জ। 'মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে বলে মনে হলেও, এটির ফলে প্রয়োজনীয় অবসর-সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।'
অনিশ্চিত পরিস্থিতি
কর্পোরেট দুনিয়ায় লাভের অংক পড়তির দিকে। বছর শেষে মন্দার সম্ভাবনাও রয়েছে। এসব অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের কিছুটা প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০১(কে) রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্টগুলোর সঞ্চয় বিনিয়োগ নাকি অবদান থেকে আসবে তা এখনো অস্পষ্ট। অনেকগুলো অবসর সঞ্চয়ী হিসাব ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করা আছে।
শেয়ারবাজারে 'বুল রান'-এর সময় অ্যাপল ইনক., মাইক্রোসফট কর্প., অ্যামাজন ডটকম ইনক., আলফাবেট ইনক., ও মেটা প্লাটফর্মস ইনক.-এর মতো কোম্পানিগুলো সূচকে প্রাধান্য ধরে রেখেছে। এ ফলে অনেক সঞ্চয়কারীর জন্য খুবই কেন্দ্রীভূত বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর সৃষ্টি হয়েছে।
২০২২-এর খারাপ বছরের পর এ শেয়ারগুলোর দরুন এ বছরটার দারুণ শুরু হয়েছে। তারপরেও, এমএলআইভি পালসের সর্বশেষ এ জরিপে অর্ধেকের বেশি বিনিয়োগকারী প্রত্যাশা করেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে মার্কিন শেয়ার বাজারের পারফর্ম্যান্সের হোতা হিসেবে বড় বড় এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থান গ্রহণ করবে বাজারের নতুন নতুন নেতারা।
'যখন এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর পাঁচটা নাম সূচকের ২০ শতাংশের বেশি দখলে রেখেছে, সেক্ষেত্রে এ কোম্পানিগুলোই আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে সূচককে পিছিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখাবে,' বলেন ডায়নাস্টি ফাইন্যান্সিয়াল পার্টানার্স-এর প্রধান বিনিয়োগ কৌশলী বব শে।
নন-ইউএস সম্পদ
শে-এর ধারণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা সম্পদ (অ্যাসেট), বিশেষত এশিয়ার সম্পদ ছাড়িয়ে যেতে শুরু করবে। এমএলআইভি পালসের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশি শতাংশই এশিয়াকে পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন, কারণ ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এ অঞ্চলেই ডলার-প্রাধান্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ অর্জন করা সম্ভব হবে।
চীন করোনার পর প্রত্যাশার চেয়েও অনেক দ্রুতগতিতে নিজেদের আবার বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত করেছে। এর ফলে নভেম্বরে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক পুনরুত্থান আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে উদ্বেগের প্রভাব পড়েছে হ্যাং সেং চায়না এন্টারপ্রাইজের সূচকে। গত জানুয়ারিতে এ সূচক শীর্ষে থাকার পর এখন নয় শতাংশ নেমে গেছে।
অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও হিসাবে সাম্প্রতিক ক্ষতির পরও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের অবসরের পরিকল্পনাকে সমন্বয় করছেন না। ৫৬ শতাংশের মতো অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা তাদের আগের অবসর পরিকল্পনায় কোনো বদল আনবেন না। প্রায় আট শতাংশ বলেছেন, তারা কখনোই অবসরে না যাওয়ার ব্যাপারে ভাবছেন।