দেশের টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ করবে চীন: রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরে চীনা বিনিয়োগ আসবে উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশ যদিও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, তবুও চীন থেকে প্রচুর টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশেই কারখানা স্থাপন করে টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করবেন।
মঙ্গলবার চীনা দূতাবাসের 'স্প্রিং ডায়ালগ উইথ চায়না' শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদন কারখানা, ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি এবং আইসিটি সেক্টরে চীনা বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানটির কো-অর্গানাইজার হিসেবে ছিল ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। আর মডারেটর হিসেবে ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ইনাম আহমেদ।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, মহামারির বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে গতবছর চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ শতাংশ, যা এবার বেড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। চীনের অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানোর সুফল বাংলাদেশও পাবে।
এফবিসিসিআই আয়োজিত বিজনেস সামিটে চীনের ৪০টি কোম্পানি অংশ নিয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এতদিন চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্নখাতে বিনিয়োগ করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে চীন সহায়তা করতে পারে। এ খাতে চীনের বিনিয়োগ আসবে।
বিশ্বের ৮০% সোলার প্যানেল চীন উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে চীন বিবেচনা করছে। চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে পারে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও বিদ্যমান ৯৮ শতাংশ পণ্যে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
গত তিন বছর ধরে মহামারিরজনিত কারণে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বেল্ট রোড ইনেশিয়েটিভ-এর আওতায় বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ বছর কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেলসহ চীনা সহায়তার আটটি মেগা প্রকল্প চালু হবে।
২০২৬ সালের মধ্যে চীনা সহায়তার আরও ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু'বছর আগে ত্রি-পক্ষীয় একাধিক সভা শেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা স্থগিত হয়ে আছে। তবে চীন কখনওই এ প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে না এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন কোনো পক্ষকে সুরক্ষা দিচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অকাস ও কোয়াড সম্পর্কে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, এগুলোর সঙ্গে উন্নয়ন ও শান্তির কোনো সম্পর্ক নেই, বরং প্রতিরক্ষার বিষয়টি জড়িত। অকাসের আওতায় অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন দেওয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই সতর্ক বলে জানান তিনি।
তিস্তার পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের অগ্রগতি রয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ জন্য সমীক্ষা চলছে। চীন তাতে সহায়তা করছে। তিস্তা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ কোনো সহযোগিতা চাইলে তা দিতে চীন রাজি আছে।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি-না, এমন এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষে চীন একটি পজিশন পেপার দিয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও চীন এ ধরনের ভূমিকা রাখতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো অস্ত্র সরবরাহ করে ইউক্রেনকে যুদ্ধে উৎসাহি করছে।
উন্নয়নের জন্য ভারত ও বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে চীন কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতে ব্রিকস ও জি-২০ সম্মেলন আয়োজনে চীন সমর্থন দিয়েছে।