ভ্যাটমুক্ত বার্ষিক টার্নওভার ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব বিসিআইয়ের
মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য সরবরাহ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বার্ষিক টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
বুধবার (২২ মার্চ) আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, "মোট লাভ খাত-ভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়; এটি যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার মোট লাভ কমলে অথবা ব্যবসায় লোকসান হলে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ সেটি বিবেচনায় নিতে রাজি হন না, এ ধারণার সমাপ্তি টানা দরকার।"
তিনি বলেন, "ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আয় কর আইনের ৮২সি ধারা অনুসারে সর্বনিম্ন কর হিসেবে উৎসে কর কর্তন করা হলেও পরর্বতীতে তা আবারও অ্যাসেসমেন্টে নেওয়া হয়। আমরা উৎসে করকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।"
বিসিআইয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন না করা হলে তা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বিধান বাতিল, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশ থেকে তিন শতাংশ উৎস কর নির্ধারণ, মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে সব ধরনের ইউটিলিটির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি, ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাত ভিত্তিক যৌথ রপ্তানিমূখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ডেড-ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান, তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য নূন্যতম ৫ বছর কর অবকাশ প্রদান করা এবং পরবর্তীতে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে কর নির্ধারণ করা।
বিসিআইয়ের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কর্পোরেট কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমিয়ে আনা, সকল রপ্তানি খাতে সমহারে উৎসে কর শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং আয়কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ, ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখে টাকায় উন্নীত করা, কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করা, ডিভিডেন্ডের ওপর কর ১০ শতাংশ করা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ২ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) সরবরাহ পর্যায়ে ৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ এবং সেল্ফ কপি পেপারের শুল্ককরসহ অন্যান্য শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ অ্যাসোসিয়েশন সকল পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ ও কর্পোরেট কর ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেন ভোক্তাপর্যায়ে অটোগ্যাসের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সংযোজিত মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব জানিয়েছে। এছাড়া, এলপিজি গ্যাসাধার উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি আমদানি পর্যায়ে শুল্কমুক্ত চায় সংগঠনটি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনস (বাপা) পর্যটন ও বিনোদন পার্কের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির আয়কর কমানো এবং প্রচলিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূসকের স্থলে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাপা।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন একই জাতীয় পণ্যকে একাধিক এইচ এস কোডে শ্রেণিবিণ্যাস ও শুল্কায়নের সম্ভাবনা থাকা পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর একই হারে নির্ধারণ, ট্যারিফ মূল্য যৌক্তিককরণ, অসত্য ঘোষণায় জরিমানার হার সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা করা ও আইজিএম সংশোধন করে সকল কাস্টমস হাউসে একই পদ্ধতি ও একই হারে শুল্ক নির্ণয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া, কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। প্রাক বাজেট আলোচনায় সবার বক্তব্য শোনার পর তা বিবেচনা করার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।