পোশাকের দোকানে জালিয়াতি ধরা পড়লে ১০ দিনের জন্য আউটলেট বন্ধ: ভোক্তা অধিদপ্তর
ঈদের আগে পোশাকের দোকানগুলোতে গিয়ে কখনো একটি পোশাকের সঙ্গে দুইটি, তিনটি পর্যন্ত প্রাইস ট্যাগ পাওয়া যায়। একই ব্র্যান্ডের শোরুমে হয়তো সকালে যে দামে একটি পোশাক বিক্রি করা হয়, বিকেলে সেটা পরিবর্তন করা হয়। এই ধরনের ঘটনা এবার ধরা পড়লে শাস্তি হিসেবে সেই পোশাকের শোরুমটি ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তৈরি পোষাক/কাপড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তর এসব কথা জানায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভোক্তার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ভোক্তা অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে জানায়, কোন ধরনের জালিয়াতি চোখে পড়লে এবার শাস্তি হিসেবে ১০ দিনের জন্য আউটলেট বন্ধ করে দেয়া হবে। একইসঙ্গে এবার থেকে মামলাও করা হবে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, "আমরা গত বছর বেনারসী পল্লী, ইসলামপুর, বিভিন্ন শপিং মল সহ ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে অভিযানে গিয়েছি। একই শার্ট ও পাঞ্জাবিতে দুইটা, তিনটা স্টিকার দেখতে পেয়েছি। কত মূল্য হবে সেটা নির্ধারণ হবে কারখানায়, আউটলেটে না।"
ভোক্তার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, "আমরা এবারে মার্কেট কমিটিগুলোকে চিঠি দিব। যাতে কোন মার্কেটে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা তারা ব্যবস্থা নেয়। না নিলে মার্কেট কমিটিকে আমরা দায়ী করবো।"
তিনি বলেন, "ফিক্সড প্রাইসের দোকানে স্টিকার বদলে যাচ্ছে। সকালে যেটার দাম ১,২০০ টাকা সেটা বিকেলে ১৬০০, আবার রাতে সেটা ২৪০০ টাকা। নতুন একটা স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছে। এতে কিন্তু সরাসরি ভোক্তার স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। যে ব্যবসাটা করছেন সেটা যৌক্তিক পর্যায়ে করতে হবে।"
ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, গত বছর রমজানের ঈদের আগে ধারণা করা হয়েছিল যে, পোশাকের মার্কেটে ১.৩৫ লাখ কোটি টাকার বিক্রি হবে কিন্তু আসলে বিক্রি হয়েছিল ১.৭৫-১.৮০ লাখ কোটি টাকার।
পোষাক ব্র্যান্ড আর্টিসানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার তৌফিক বিপ্লব বলেন, "গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার জন্য ডাবল প্রাইস ট্যাগ হয় না। আউটলেটে প্রাইস পাল্টানো হয় না, বরং হয় হেড অফিস থেকে। এই ভুলগুলো যাতে না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক থাকবো।"
আড়ংয়ের আউটলেট সুপারভাইজার আয়শা আক্তার বলেন, "কনজ্যুমার বিহেভিয়ার, প্রাইসিং এ আমরা যথেষ্ট নজর রাখি। একটা পণ্য যখন উৎপাদন করা হয় তখন কাঁচামালের কস্টিংয়ের এর উপর দামটা নির্ভর করে।"
সভায় অধিদপ্তর কর্তৃক কাপড়ের ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে প্রাপ্ত অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- ঈদ উপলক্ষ্যে একই পোষাকের দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেয়া, একটি পোষাকে বিভিন্ন দামের প্রাইস ট্যাগ লাগানো, কাপড়ের ক্ষেত্রে মিটারের পরিবর্তে গজের ব্যবহার, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, আসল বলে নকল কাপড় বিক্রি করা।
এছাড়া রেডিমেড গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে মোড়কের গায়ে 'এমআরপি' না লেখা, এমআরপি ঘষামাজা/কাটাকাটি করে বেশি মূল্য নির্ধারণ করা, পুরাতন মূল্যের উপর নতুন স্টিকার লাগিয়ে বেশি মূল্য নেয়া, ১০০% কটন ঘোষণা দিয়ে তা না দেয়া, সময়মত পরিবর্তন (এক্সচেঞ্জ) করে না দেয়া, ভোক্তাদের পেমেন্টের ক্ষেত্রে লম্বা লাইনে অপেক্ষমান না রাখা ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।