বিনিয়োগের তুলনায় ৮ মাসে ৩৫০০ কোটি টাকা বেশি তুলে নিয়েছে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা
সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কম, বিনিয়োগে নানা শর্ত ও মূল্যস্ফীতির কারণে বিনিয়োগের তুলনায় অধিক টাকা তুলে নিচ্ছে গ্রাহকরা। গত আট মাসে (২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই খাতের বিনিয়োগকারিরা ৩৫১০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ এর জুলাই-ফেব্রুয়ারি অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছে ৫৫,৮৬২ কোটি টাকা। একই সময়ে ৫৯,৩৭২ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয়ের চেয়ে ৩,৫১০ কোটি টাকা বেশি তুলে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক ডলার সংকট মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলেছে। আয় না বাড়লেও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এই কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য নিজেদের সঞ্চয় ব্যয় করছে তারা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ে প্রায় ১৪,৬৮৯ কোটি টাকা।
২০২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্রে ৭১,০৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং ৫৬,৩৬৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। বিনিয়োগের পরিমাণ উত্তোলনের চেয়ে ১৪,৬৮৯ কোটি টাকা বেশি।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে ক্যাপিটেল মেশিনারিজ আমদানি কমায় নতুন করে শিল্প কারখানা তৈরি কমেছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় অনেকে জমানো টাকা তুলে নিচ্ছে।
তারা আরও বলেন, গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে যে হারে মুনাফা পাচ্ছে তার তুলনায় বেশি সুদ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকে আমানত রাখতে কাগজপত্রে জটিলতা কম থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, "সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমার দুটি কারণ। একটি হলো সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কম থাকায় ব্যাংক ও ব্যাংক বর্হিভূত খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ কম নেওয়া হচ্ছে। অন্যটি হলো মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষে বিনিয়োগের তুলনায় জমানো টাকা বেশি ভাঙছে।"
তিনি বলেন, "বাজারে গেলেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কেন কমছে তা বোঝা যাবে। সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাই সঞ্চয়পত্রে জমা রাখার তুলনায় মানুষ তা ভাঙছে বেশি।"
তিনি আরও বলেন, "সাধারণত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মধ্যবিত্ত মানুষ। এছাড়া কিছু নারী আছে যাদের আয়ের উৎস নেই। তাদের পরিবার অথবা সন্তানরা হয়তো এককালিন কিছু টাকা দিয়েছে। কিন্তু এখন পাঁচ লাখ টাকার বেশি সকলের টিন সার্টিফিকেট লাগবে, এরে কারণেও বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে।"
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিতে হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আয়কর রিটার্নের স্লিপ জমা করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এ ঝামেলায় যেতে চান না, তাই বিনিয়োগও কমছে।"
"তাছাড়া, বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে যাদের আগে থেকে বেশি বিনিয়োগ ছিল, তারা মেয়াদপূর্তিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এছাড়া প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা ও এনআইডি শর্তের কারণে সেখানে কম বিনিয়োগ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডের বিনিয়োগ সীমা ও এনআইডি শর্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ০.২১ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বেড়ে ৮.৭৮% এ এসে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী থাকলেও, গত সাত মাস ধরে ৮ শতাংশের উপরেই ছিল এটি।