এমএফএস মাধ্যমে এক বছরে দৈনিক লেনদেন বেড়েছে ২৪%
বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন পরিষেবায় গত এক বছরে দৈনিক লেনদেন প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৩,৪৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এমএফএসের মাধ্যমে। মাসশেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭,৩০৮ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে দৈনিক এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২,৮০৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত এক বছরে লেনদেন প্রায় ৬৭০ কোটি টাকা বেড়েছে।
গত বছরের এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে ৩,৫৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এমএফএস চালু হওয়ার পর দৈনিক লেনদেনের এ পরিমাণটিই সর্বোচ্চ। সে হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক দ্বিতীয় সর্বোাচ্চ লেনদেন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত ঈদ সামনে কর্মচঞ্চলতা বাড়ায় গ্রাহকদের লেনদেন বাড়ছে। এছাড়া, সাধারণত রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকলে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ে। গত দুইমাস ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকায়, সেটিও লেনদেন বাড়াতে সাহায্য করেছে।
বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, "ডিজিটাল লেনদেনে মানুষ এখন ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। পাশাপাশি আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি নতুন নতুন প্রোডাক্ট অন্তর্ভুক্ত করতে। এখন মার্চেন্ট পেমেন্ট, ব্যাংক জমাসহ অনেক সুবিধাই এমএফএসের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।"
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "আমরা এখন বিকাশের মাধ্যমে ডিজিটাল ন্যানো লোন দিচ্ছি। গ্রাহকেরা চাইলে ব্যাংকে না গিয়েই বিকাশের মাধ্যমে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন। আমাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় কোন গ্রাহককে কী পরিমাণ লোন দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ করা হচ্ছে।"
ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রাহকরা ২৯,২২৮ কোটি টাকা ক্যাশ ইন, ২৮,১৩৬ কোটি টাকা ক্যাশ আউট ও ২৭,৫২২ কোটি টাকা পারসন-টু-পারসন ব্যালেন্স ট্রান্সফার করেছেন। এছাড়া, স্যালারি ডিস্ট্রিবিউশন, বিল পেমেন্টসহ সবক্ষেত্রেই ইয়ার-অন-ইয়ার লেনদেন বেড়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে মোট ৪৫.০৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.২৩ কোটি টাকা বেশি। মোট লেনদেনের হিসাবে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি ৪৬.৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত জানুয়ারি মাসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি শেষে এমএফএসের মোট গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯.৬৮ কোটিতে। এরমধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১১.৩৭ কোটি এবং নারী গ্রাহক ৮.২৬ কোটি। এছাড়া ৪.৬৮ লাখ প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য একাউন্ট খোলা হয়েছে। গত এক বছরে গ্রাহক ২.০৫ কোটি বেড়েছে।
দেশের এমএফএস গ্রাহকদের মধ্যে ৫৫.৬৪ শতাংশ বা ১০.৭৯ কোটি গ্রাহকই গ্রামাঞ্চলের। বাকি ৪৪.৩৬ শহরাঞ্চলের গ্রাহক।
এছাড়া, ৭ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে আবারও এমএফএস অ্যাকাউন্টগুলোতে জমা টাকার পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে, গত জুনে সর্বশেষ ১০,৮৭০ কোটি টাকা জমা ছিল এসব অ্যাকাউন্টে।
২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। আর রকেটের পরিষেবা চালুর মাধ্যমে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ দেশে এমএফএসের যাত্রা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৩টি ব্যাংক বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ এবং শিওরক্যাশের মতো বিভিন্ন নামে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করছে।