জুলাই থেকে ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট চালু হবে: আইএমএফ’কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
চলতি বছরের জুলাই থেকে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট বা মার্কিন ডলারের অভিন্ন বিনিময় হার চালু করা হবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে এক বৈঠকে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আবারও ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট চালুর আহ্বান জানায় আইএমএফ। এছাড়া, রপ্তানিকারকরা ইচ্ছা করে রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন করছে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সেইসঙ্গে বৈঠকে চলতি ও আগামী অর্থবছরে রপ্তানি আয় কেমন হবে, সে সম্পর্কেও ধারণা নিয়েছেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি যাচাই করতে প্রথমবারের মতো রিভিউ করছে আইএমএফ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির কাছ থেকে ৪৭৬ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি পায় বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটির আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ২৫ জুলাই থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে।
আইএমএফ'র সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তপন কান্তি ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আইএমএফ জানতে চেয়েছে, এক্সপোর্ট এবং ইম্পোর্টের ক্ষেত্রে একটি এক্সচেঞ্জ রেট হলে কেমন হয়। আমি বলেছি, এটা হলে ভালো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও এ বিষয়ে একমত আছেন।"
"আগামী জুলাই থেকে এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্টের ক্ষেত্রে একটি এক্সচেঞ্জ রেট কার্যকর করবে বাংলাদেশ ব্যাংক," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এক্সপোর্টারদের জন্য ডলারের অফিসিয়াল রেট ১০৬ টাকা। অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১৩-১১৪ টাকা দরে ডলার কিনে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে তাদের।
রপ্তানি আয়ের বিষয়ে আইএমএফ
'রপ্তানিকারকরা ইচ্ছা করে রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন করছেন না'- এমন তথ্য সঠিক কি-না, সে বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের কাছে প্রশ্ন রাখে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে আইএমএফ সচিবকে জানান, অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
জবাবে সচিব বলেন, রপ্তানিকারকরা ইচ্ছা করে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন করছে না- এমন তথ্য সঠিক নয়। আর অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ এক বছরে তিন বিলিয়ন ডলার হয়েছে, নাকি এটি গত কয়েক বছরের ক্রমপুঞ্জিভূত পরিমাণ, তা পর্যালোচনা করতে হবে।
কোভিডের আগে অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ কতো ছিল, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখতে আইএমএফকে পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন করতে হয়। বিদেশি ক্রেতা সময়মত তা পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে রপ্তানিকারক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮০ দিনের মধ্যে প্রত্যাবাসনের সুযোগ পান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, রপ্তানি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসিত হয়নি এমন অর্থের পরিমাণ প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ১৮০ দিন পার হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন হয়নি।
বাণিজ্য সচিব আইএমএফকে বলেছেন, রপ্তানি আয় কেন সময়মতো প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না, সে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক জানাতে পারবে।
চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কেমন হবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়া, রপ্তানি বাড়াতে সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
এ প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য সচিব বলেছেন, গত অর্থবছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ শতাংশ। এ বছর প্রথম ৯ মাসে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের সামান্য বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ বছর রপ্তানিতে গত বছরের মতো উচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে না।
"আমাদের রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য থেকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এসব দেশের ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের মতো। এসব দেশের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাত নেই। ফলে এ বছর রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি গতবারের তুলনায় কম হবে," জানান সচিব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমলেও দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অপ্রচলিত বাজারে আয় বাড়ছে।
রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, আইএমএফ'র এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেছেন, ব্যবসার প্রক্রিয়াগুলো সরকার সহজ করছে সরকার। বিভিন্ন লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ব্যবসা ও রপ্তানিকারকদের 'কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস' কমানোর চেষ্টা চলছে। নতুন বাজার ও নতুন পণ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সাল থেকে জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৪ সাল থেকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এছাড়াও, বিবিএস স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫০ বছর ধরে দেশের জিডিপি সম্পর্কিত সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংকলনও শেষ করেছে ইতোমধ্যে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আইএমএফ'র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) মোঃ মতিয়ার রহমান টিবিএসকে বলেন, "অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।"
"আমরা আমাদের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) আপডেট করার বিষয়ে আইএমএফকে জানিয়েছি। মোট ১২টি বিভাগের অধীনে ৭২২টি খাদ্য ও অ-খাদ্য পণ্য সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের সিপিআইতে ৮টি বিভাগের অধীনে ৪১২টি আইটেম অন্তর্ভুক্ত ছিল," বলেন তিনি।
সভায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।