চিনি, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর দাবি রিফাইনারদের
সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে দেশের বাজারে চিনির দাম আরও বাড়ানোর কৌশল হিসেবে পণ্যটি আমদানি না করার হুমকি দিচ্ছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মিল মালিকরা পণ্যটি আমদানির সাহস পাচ্ছেন না।
দেশে ভোজ্যতেল ও চিনির উৎপাদক গুটিকয়েক কোম্পানি। দু'টি সংগঠন গঠন করে পৃথক প্রস্তাবে তারা চিনির দাম কেজিতে ২৬ টাকা বাড়ানো এবং ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
বুধবার ভোজ্যতেল ও চিনির নতুন দাম ঘোষণা হতে পারে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তবে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী নয়, দাম নির্ধারণী ফর্মুলার ভিত্তিতে হিসাব-নিকাশ করে পণ্য দু'টির দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে মিলগুলো। এমনকি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে বেশিরভাগ মিল।
সরকার প্রতি কেজি চিনির দাম ১০৪ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দোকানদাররা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে চিনি পাচ্ছেন না তারা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি ৬৭৫ মার্কিন ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিলো ৫২০ ডলার। এ অবস্থায় সমিতির সদস্যরা অপরিশোধিত চিনি আমদানির এলসি খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
'আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম যতটা বেড়েছে, দেশের বাজারে পরিশোধিত চিনির দাম ততোটা বাড়েনি। এ অবস্থায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিনি আমদানিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন', বলেছেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান।
সুগার রিফাইনার্স বলেছে, বর্তমান দরে প্রতি কেজি চিনির আমদানি মূল্য দাঁড়াবে ১৩১ টাকা। এরসাথে বিভিন্ন শুল্ক ও ভ্যাট যুক্ত হবে আরও ৩৫ টাকা। অর্থাৎ, চিনি মিলগুলোর হিসাবে প্রতি কেজি চিনির দাম হবে ১৬৬ টাকা।
রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকা মহানগরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যদিও সরকার সর্বশেষ চিনির দাম নির্ধারণ করেছে ১০৩ টাকা। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত এই দরে চিনি বিক্রি করেনি কোনো কোম্পানি। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গতকাল চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সমিতির পক্ষ থেকে এই চিঠি এলো।
দেশে চিনি পরিশোধন করে ৫/৬টি কোম্পানি। এরমধ্যে তিনটি কোম্পানিই বাজারের সিংহভাগ দখল করে রেখেছে। দেশে বছরে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয় চিনিকলগুলো উৎপাদন করে থাকে। বাকি চিনি বেসরকারি খাতের কয়েকটি কোম্পানি আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ টিবিএসকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার ভোজ্যতেল ও চিনির নতুন দাম ঘোষণা করা হতে পারে।
'ব্যবসায়ীরা যে দাম প্রস্তাব করেছে, সে অনুযায়ী দাম ঠিক হবে,তা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণ করে ফর্মুলা অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা মোট মূল্যের উপর ১৫% ভ্যাট হিসাব করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা যৌক্তিক নয়।'
এছাড়াও টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা আর বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাম তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা।