চোরাচালান রোধে চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব ট্যারিফ কমিশনের
চোরাচালান ঠেকাতে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমাতে চিনির ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।
বর্তমানে প্রতিবেশি দেশ ভারতের বাজারে এককেজি চিনির মূল্য ৪৫-৫০ টাকা হলেও বাংলাদেশের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে দামের ব্যাপক পার্থক্য এবং আমদানি শুল্ক উচ্চ হওয়ায় বৈধপথের চেয়ে অবৈধপথে আসা চিনির সরবরাহ বাড়ছে; এতে করে দেশে উচ্চমূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এমন পরিস্থিতে দেশের বাজারে চিনির মূল্য কমিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। একইসঙ্গে, চোরাচালান বন্ধ করতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোরও সুপারিশ প্রতিষ্ঠানটির।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া কমিশনের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে গড়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ১৮.৪৩ লাখ মেট্রিক টন। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই গড় আমদানির চেয়েও ৪.৫৭ লাখ টন কম চিনি আমদানি হয়েছে। একইভাবে, পরিশোধিত চিনির আমদানিও কমেছে ০.১৩ লাখ মেট্রিক টন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈধপথে চিনির আমদানি কম হলেও বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এক্ষেত্রে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে চিনি আমদানির মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কমিশন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখিয়েছে, বর্তমানে চিনি আমদানিতে আরোপ করা ৩০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনলে সরকারের এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ কমবে না।
একইসঙ্গে, অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে চিনি আমদানি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়াতে আইন প্রয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
উচ্চ শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণে কমিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৪ লাখ টনের বেশি চিনি আমদানি কমলেও সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২০২৩ অর্থবছরে প্রতিটন অপরিশোধিত চিনির গড় আমদানি মূল্য ছিল ৪৮,১৩১.৮৭ টাকা— যা ২০২৪ অর্থবছরে ৩৫.২০ শতাংশ বেড়ে প্রতিটনের দাম দাঁড়ায় ৬৫,০৭৬.৩৮ টাকা।
বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোতে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রাক্কলিত রাজস্বের পরিমাণ ৩০,৭৭০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি মেট্রিক টন চিনির আমদানিতে যে খরচ হয়, তার প্রায় অর্ধেকই যাচ্ছে সরকারের রাজস্বে। অন্যদিকে, ভোক্তারা বাড়তি মূল্যে চিনি কিনে চাপে পড়েছেন।
জানা যায়, প্রতিটন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে এখন কাস্টম ডিউটি (সিডি) দিতে হয় ৩,০০০ টাকা। এর সঙ্গে আবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ এআইটি, ৩০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) এবং ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যাক্স (এটি) রয়েছে।
একইভাবে, পরিশোধিত চিনি আমদানি করলে প্রতি মেট্রিক টনে ৬,০০০ টাকা সিডি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এআইটি, ৩০ শতাংশ আরডি এবং ৫ শতাংশ এটি রয়েছে।
এর মধ্যেই গত এক মাসে চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ২০.৮১ শতাংশ বেড়ে ৪৭৬.১৯ ডলারে পৌঁছেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা গেছে।
আমদানি মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্থানীয় বাজারেও মূল্য বৃদ্ধির বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ জানিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এর একটি আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য বৃদ্ধি এবং দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। এর প্রভাবেই মূলত বৈধপথে চিনি আমাদনির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে।
কমিশন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের বাড়তি দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির জটিলতাও রাতারাতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শুল্ক ও কর হ্রাস করে যদি চিনির মূল্য কমানো সম্ভব হয়, তাহলে চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানি হ্রাস পাবে এবং বৈধপথে আমদানি উৎসাহিত হবে।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তসলিম শাহরিয়ার টিবিএসকে বলেন, "আমদানিতে শুল্ক কমলে দেশের বাজারে চিনির দাম কিছুটা কমবে এবং একইসঙ্গে আমদানি বাড়লে সরকারেরও রাজস্ব আদায় বাড়বে।"