টাকার মান কমলো দেড় টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরে ১৫তম বারের মতো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট দেড় টাকা বাড়িয়েছে; এ অর্থবছরে টাকার সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন এটি।
ডলার বিক্রির নতুন রেট ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এর আগে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট সর্বোচ্চ ১ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরে ১৫ বারের মধ্যে ৮ বারই ডলারের দাম ১ টাকা করে বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরমধ্যে মার্চ মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) এর ১.০৫ বিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ ৩১ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসে।
এই সপ্তাহে আকু-র আরেকটি বিল পরিশোধের পরে রিজার্ভ আরও কমে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে গত এপ্রিলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সময়েও প্রতিমাসে ১ টাকা করে ডলারের দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২১%; এর ফলে ডলারের রেট ৮৬.৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৪.৫০ টাকা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি প্রধান কারণে দ্রুতহারে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এরমধ্যে একটি হলো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমানো। আরেকটি কারণ হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ইউনিফায়েড এক্সচেঞ্জ রেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে। টিবিএসকে এ তথ্য জানিয়েছেন ব্যাংকের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক খাতের নীতিনির্ধারণী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকমাসে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট আরো কিছুটা বাড়তে পারে।
বর্তমানে বাজারে ডলারের বেশ কয়েকটি রেটের প্রচলন আছে। এরমধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)-র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক্সপোর্ট প্রসিডে ১০৬ টাকা এবং রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা রেট দিচ্ছে ব্যাংক।
এছাড়া ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জে ডলারের রেট ১০৭ টাকা। মঙ্গলবার ইমপোর্ট সেটেলমেন্টে গড়ে ১০৭ টাকা রেট ধরেছে ব্যাংকগুলো। যদিও ইমপোর্টাররা দাবি করেছেন, ব্যাংকগুলো তাদের কাছে ১১৩-১১৪ টাকা পর্যন্ত রেট নিচ্ছে।
রিজার্ভ নেমেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে
সরকারি বিভিন্ন এলসির পেমেন্টের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ক্রমাগত ডলার বিক্রির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার নতুন দামে ৫৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তারা জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনশেষে রিজার্ভ ৩০.৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরখানেক ধরে রিজার্ভ কমার ধারায় আছে। ২০২২ সালের এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
অবশ্য এর বড় অংশই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করার কারণে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ১১.৮৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানি কম থাকার পাশাপাশি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২১ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, সরকারি কেনাকাটা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি এলসির দাম পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়।
রিজার্ভ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হলেও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো বলছে, চাহিদামতো ডলার পাচ্ছে না তারা।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, "আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলার চাইছি, তারা আমাদের সে পরিমাণ ডলার দিচ্ছে না। আমরা ১০০ মিলিয়ন চাইলে ৫-১০ মিলিয়ন পাচ্ছি। ফলে প্রয়োজনীয় ডলারের জন্য আমাদের প্রচলিত বাজারের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।"