আমদানি কমলেও এপ্রিলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১.১০ বিলিয়ন ডলার
ডলার সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১.১০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫.৭৩ বিলিয়ন ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৭.৬৯ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা বলেন, রিজার্ভকে সংরক্ষণ করতে সরকার সকল ধরনের আমদানিতে কড়াকড়ি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমদানির পরিমাণ কমলেও রপ্তানি না বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এছাড়া কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও ক্যাপিটেল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ যা নিয়মিত রিজার্ভকে সংকুচিত করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৫৮.৭৮ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৮.৬৭ বিলিয়ন ডলার, সে হিসেবে আমদানির পরিমাণ কমেছে ১৪.৪০%।
ফরেন পেমেন্টের ক্ষেত্রে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স থেকেই পরিশোধ করা হয়। যদি কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স নেগেটিভ হয়ে যায়, তাহলে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট করা হয়; আর যদি এই অ্যাকাউন্টও নেগেটিভ হয়ে যায়, তাহলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্থ পরিশোধের সর্বশেষ উপায় হয়ে ওঠে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ফ্লো কম ও ফরেন নীট ইনভেস্টমেন্ট এবং বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ কমায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট দুই বিলিয়নের বেশি ঘাটতিতে পড়েছে, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবছরের এই দশ মাসে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হয়েছে ২.১৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ছিল পজেটিভ ১১.৯৫ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি কমার পরেও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বাড়তে থাকা ঘাটতি সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) চাপ সৃষ্টি করে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, "ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উভয়ই ঘাটতিতে থাকলে বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। তখন একটি দেশকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এক্সটার্নাল পেমেন্ট করতে হবে, যা রিজার্ভের দ্রুত ক্ষয় ঘটাবে।"
চলতি অর্থবছরের দশ মাসে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হয়েছে ৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ১৫.৪৮ বিলিয়ন ডলার।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে চলতি বছরের জুন শেষে নীট রিজার্ভ রাখতে বলা হয়েছে ২৪.৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে নীট রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো।