ঢাকায় শোরুম খুলছে নাইকি, অ্যাডিডাস
ঢাকার স্নিকারপ্রেমী ও ক্রীড়ামোদীদের জন্য অপেক্ষা করছে দারুণ উত্তেজনার এক সংবাদ, কারণ বিশ্বের দুটি শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড – যুক্তরাষ্ট্রের নাইকি ও জার্মানির অ্যাডিডাস – আগামী দুই মাসের মধ্যেই রাজধানীতে তাদের শোরুম খুলবে।
এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে ডিবিএল গ্রুপ। এর আগে ২০১৯ সালে তারা আরেকটি বিখ্যাত স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড পুমা-কে ঢাকায় এনেছিল।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ বলেন, "এরমধ্যেই অ্যাডিডাসের সঙ্গে আমাদের কনট্রাক্ট সাইন হয়ে গেছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে তাদের স্টোর গুলশানে চালু হবে। কাস্টমারদের কেমন সাড়া পাওয়া যায় তার ওপর নির্ভর করে পরে স্টোরের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।"
"নাইকির সাথেও কনট্রাক্ট ফাইনাল হয়ে গেছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে তাদের স্টোর চালু করা সম্ভব হবে," যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে এসব বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের প্রবেশ এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনার প্রতি তাদের আস্থারই প্রতিফলন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দ্রুতলয়ে বেড়েছে। সেই সুবাদে, বর্তমানে দেশে সচ্ছল ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
এদিকে বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে নাইকি ও অ্যাডিডাসের কিছু পণ্য পাওয়া গেলেও – সেগুলোর দাম যথেষ্ট উচ্চ।
যেমন ১,০০০ টাকা মূল্যছাড় দেওয়ার পরও পুরুষদের জন্য অ্যাডিডাসের অ্যাডিজিরো সিলেক্ট স্নিকার ১৮,৯৯৯ টাকায় বিক্রি করছে বাটা। অথচ, একই স্নিকারের দাম ৮৮ ইউরোর কম। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯,১৫০ টাকা বা বাটার বিক্রয়মূল্যের অর্ধেকেরও কম।
নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার প্রধান পণ্যসামগ্রী হলো জুতা, বা বিশেষত স্পোর্টস সু। এছাড়া, তারা স্পোর্টসওয়্যার, ব্যাগ, ক্যাপসহ অন্যান্য পোশাক পণ্য বিক্রি করে।
নাইকির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে নাইকি'র স্টোর আছে প্রায় ২,২০০টি। একইভাবে অ্যাডিডাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তাদেরও বিপণী আছে ২ হাজারের উপরে।
১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অরিগনে প্রতিষ্ঠা হওয়া নাইকি'র প্রতিবেশী ভারতে আছে ১২৫টি আউটলেট। এর মধ্যে কলকাতায় নাইকি ও অ্যাডিডাসের বেশ কয়েকটি বিপণী রয়েছে।
ঢাকায় বিশ্বের নামকরা দুটি কোম্পানির স্টোর খোলার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এখানকার উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা।
শেখ মোহাম্মদ দানিয়েল- যিনি একটি বীমা কোম্পানির পরিচালক এবিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করে টিবিএসকে বলেন, "আামি বিদেশে গেলে নাইকি অ্যাডিডাসের জুতা কিনি। এখন যদি ঢাকায় কেনার সুযোগ তৈরি হয়, তা আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর।
এছাড়া খেলোয়াড়সহ দেশের স্পোর্টসের সাথে জড়িতদেরও বাইরের দেশে গিয়ে এসব পণ্য কিনতে হয়। আবার অনেকে অনলাইনেও বিদেশ থেকে এসব পণ্য কিনছেন। এখন দেশে কেনার সুযোগ থাকলে, তাদের জন্য সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে নেওয়ার চাপ কমাতেও তা সহায়ক হবে"– বলেন তিনি।
২০১৯ সালে ঢাকায় পুমার প্রথম স্টোর চালুর পর সেটির সফলতা দেখে একে একে বিপণীর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে বৈশ্বিক এই ব্র্যান্ডের বিপণী চারটিতে দাঁড়িয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরায় এই ব্র্যান্ডেরই আরো একটি স্টোর চালু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ বলেন, "দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। ফলে যারা নিয়মিত এসব কোম্পানির পণ্য ব্যবহার করেন, এমন শ্রেণির লোকসংখ্যা বাড়ছে।"
তিনি উল্লেখ করেন, লাভজনক হওয়ার কারণেই আমরা স্টোর বাড়িয়েছি। তবে শুরুতেই খুব বেশি মুনাফার আশা করিনি।
"প্রথমদিকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর সাথে সম্পৃক্ততা তুলে ধরে ডিবিএল গ্রুপের ব্র্যান্ডিং করাটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল" বলেন তিনি।
বাংলাদেশে দাম এত বেশি কেন
শিল্পের অভ্যন্তরীণদের মতে, দেশের বাজারে এসব পণ্যের অত্যন্ত বেশি দামের একটা বড় কারণ – আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত শুল্ককর আরোপ।
এম এ রহিম ফিরোজ উল্লেখ করেন যে, স্নিকারে ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক থাকে, অন্যদিকে এক্সেসরিজ ও পোশাকের ক্ষেত্রে তা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, এবং অন্যান্য দেশের বাজারের তুলনায় এই পার্থক্য বেশ উল্লেখযোগ্যই হয়।
তিনি বলেন, "ইমপোর্ট ট্যাক্স কমানো হলে, আমরা আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য অফার করতে পারব।"
এছাড়া, বৈশ্বিক এসব ব্র্যান্ড যদি ফ্রাঞ্চাইজগুলোকে তাদের পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করতে দেয়, তাহলেও দাম কমার সম্ভাবনা থাকবে। তবে এপর্যন্ত এ ধরনের কোনো অনুমতি তারা দেয়নি বলেও জানান।
"এই ব্র্যান্ডগুলোর কিছু পণ্য এখন ভারতে প্রস্তুত করা হয়। আমাদের অংশীদার ব্র্যান্ড বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের অনুমতি দিলে, তখন সহজেই আরও কমমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে" - যোগ করেন এম এ ফিরোজ।
স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো যেখানে ব্যর্থ
বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ফুটওয়্যার পণ্য বিক্রিতে ভালো এগিয়েছে। স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে বে-সহ (Bay) বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বাটা, লোটো আছে এ তালিকায়। কিন্তু, এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য মানের দিক থেকে পুমা, নাইকি কিংবা অ্যাডিডাসের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
বেঙ্গল লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, মানের ঘাটতির পেছনে একাধিক কারণ: নিম্ন চাহিদা, ক্রেতার ক্রয় সক্ষমতা, যথাযথ মানের ঘাটতি, উচ্চ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনায় ঘাটতির মতো বিষয়গুলো দায়ী।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "এজন্য যে ধরনের উদ্যোগে যে বিনিয়োগ দরকার সে বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। নাইকি ও অ্যাডিডাস অনেক পুরনো কোম্পানি, তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হতেও সময় লেগেছে। কিন্তু, এখানে তা হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "কোয়ালিটির ঘাটতি আছে। কারণ স্থানীয় বাজারে যারা আছে, তারা এখনো সেদিকে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও উদ্ভাবন – আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের পর্যায়ে সেভাবে পৌঁছাতে পারেনি। তাছাড়া, ক্রেতারাও বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে যেভাবে মূল্যায়ন করে, স্থানীয় ব্র্যান্ডকে সেভাবে মূল্যায়ন করে না।"