আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকারদের কঠোর নির্দেশ গভর্নরের
দেশের ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি মনিটরিংয়ে অনেকটা কমে এসেছে ওভার ইনভয়েসিং, তবে আন্ডার ইনভয়েসিং এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আন্ডার ইনভয়েসিং রোধে ব্যাংকের এমডিদের কঠোর তদারকির নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বুধবার দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিয়ে ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর এসব নির্দেশনা দেন। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সকল ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত আমদানি মনিটরিং করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী সকল ধরণের আমদানি ঠিক রয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা করে থাকে।
তিনি বলেন, "আমাদের মনিটরিংয়ের ফলে ওভার ইনভয়েসিং অনেকটা কমে আসলেও এখনও আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। তাই গভর্নর এ সভায় ব্যাংকগুলোর এমডিদের আন্ডার ইনভয়েসিং যথাযথভাবে মনিটরিং করার নির্দেশ দেন।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওভার ইনভয়েসিং প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, "ওভার ইনভয়েসিং কমে আসলে সরকারের ইম্পোর্ট ট্যাক্স আরও বেড়ে যাবে এবং হুন্ডির প্রবণতাও কমে আসবে। যার ফলে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে।"
তিনি আরও বলেন, সভায় ব্যাকগুলো ঋণ জামিনদারের আঙুলের ছাপ শিথিলতার কথা বলেছেন। তবে সময় লাগলেও গভর্নর হাইকোর্টের নির্দেশনা উল্লেখ করে এটা বাস্তবায়নে যথার্থভাবে পরিপালনের নির্দেশ দেন।
ব্যাংকার্স সভায় দেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকের আটকে থাকার ঋণের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর ব্যাংকগুলোর এমডিদের বলেছেন শুধুমাত্র আদালত নির্ভর না হয়ে ভিন্ন উপায়েও ঋণের টাকা আদায়ের প্রতি জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোর অর্থঋণ আদালতে মামলার পরিমাণ রয়েছে ২১৪,২৮২টি। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর আটকে থাকার ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। গভর্নর এসব ঋণের টাকা পুনরুদ্ধার করতে ব্যাংকগুলোকে আরও গুরুত্বসহ দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি। গত ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি।
অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, "এই মুহূর্তে বাংলাদেশ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ফেস করছে। সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেই নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।"
"আমাদের বাণিজ্য ঘাটতিটা কিছুটা কমে আসলেও ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টস ব্যালেন্স এখনো ঋণাত্মক। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি অতিরিক্ত দরে ডলার সংগ্রহ প্রতিরোধ, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ভূমিকা এবং ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।"
এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে রয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, "তারল্য সংকট রয়েছে। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে এই সমস্যা। সব ব্যাংকের সংকট নেই। ব্যাংকগুলোকে সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।"