জুলাই থেকে আগস্টে বেড়েছে এলসি খোলার হার, কমেছে নিষ্পত্তি
আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ জুলাই থেকে প্রায় ১২% বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এ মাসে এলসি খোলা হয়েছে ৫.৫৯ বিলিয়ন ডলারের।
যদিও প্রান্তিক হিসাবে এলসি খোলার পরিমাণ এখনও ১৫% কম। অন্যদিকে, মাসিক ও প্রান্তিক উভয় হিসাবেই আগস্টে কমেছে এলসি নিষ্পত্তি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইতে এলসি খোলা হয় ৪.৯৬ বিলিয়ন ডলারের।
প্রান্তিক হিসাবে এলসি খোলার কারণ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণের আমদানি এলসি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের ফলে ওভার-ইনভয়েসিং কমেছে, ফলে কমেছে এলসি খোলাও।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আমরা আগের তুলনায় মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে বেশ সতর্ক এবং শুধুমাত্র প্রয়োজন হলেই এলসি খুলি।"
এর একটি কারণ হিসেবে তিনি এলসি খোলার সময় পেমেন্টের শিডিউল নির্ধারণের নিয়মকে দায়ী করেন। "আমাদের ডলার ফ্লো অতটা বেশি নয়। সামগ্রিকভাবেই এলসি খোলার পরিমাণ কমছে," বলেন তিনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিলাসবহুল দ্রব্যের জন্য এলসি খোলার হার কমানোর বিষয় উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তিও প্রান্তিক হিসাবে আগস্টে ৩৫% এর বেশি কমেছে। গত বছরের আগস্টে ৭.৬৯ বিলিয়ন ডলার এলসি পেমেন্ট করা হয়, এ বছরের একই মাসে তা ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। জুলাইতে এলসি পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার।
অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান ব্যাখ্যা বলেন, এলসি খোলার পরিমাণ কমলে স্বাভাবিকভাবেই নিষ্পত্তি কম হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের মধ্যে অর্থপ্রদান বৃদ্ধিতে যে বাধা রয়েছে- সেটিকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করেন তিনি।
ইনকামিং ডলারের প্রবাহ বাড়াতে ডলারের জন্য একটি বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে তিনি পরামর্শ দেন, বাজার-ভিত্তিক হার প্রাথমিকভাবে ১২০-১৩০ টাকা হতে পারে এবং শেষমেশ এটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাবে। তিনি আরও বলেন, এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি দুটি বিষয়কেই প্রভাবিত করছে ডলারের নন-মার্কেট রেট।
অপর একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এলসি খোলায় বিধিনিষেধের কারণে পেমেন্ট কমে গেছে। ফলে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। তবুও, আগস্টে রেমিট্যান্স ২১% কমে যাওয়ায় দেশে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বেশ বড় ব্যবধান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রিজার্ভ থেকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। চলমান ডলার সংকট নিরসনে এসব পদক্ষেপ কার্যতই যথেষ্ট নয়।