‘টাকা পে’ কার্ড চালু হচ্ছে আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
আজ বুধবার চালু হচ্ছে দেশের প্রথম নিজস্ব ন্যাশনাল কার্ড স্কিম 'টাকা পে'। এর মাধ্যমে দেশের বিদেশি কার্ডের উপর নির্ভরতা ও ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই কার্ডের ধরন হবে ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মতো। প্রাথমিকভাবে দেশে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রমান্বয়ে এর মাধ্যমে টাকা-রুপি কার্ডও চালু করা হবে, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারতে লেনদেন করতে পারবে।
বর্তমানে প্রতিবেশী অধিকাংশ দেশে এমন নিজস্ব কার্ড আছে। সেগুলো হলো-ভারতের কার্ড 'রুপে', পাকিস্তানের 'পাকপে', শ্রীলংকার 'লংকাপে' ও সৌদি আরবে আছে 'মাদা।
বুধবার গণভবনে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে কার্ডটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সহ অন্যান্যরা উপস্থিত থাকবেন।
উদ্বোধনের পরপরই এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে। নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি পুরনো ব্যাংক অ্যাকউন্টেও এ কার্ডের মাধ্যমে সেবা নেয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে আগের নেয়া ডেবিট কার্ডটি স্থগিত করে 'টাকা পে' কার্ডের সেবা নিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম 'ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ' ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে একই সেবা দেবে 'টাকা পে' কার্ড। বিদ্যমান ব্যাংক হিসাবের বিপরীতেও এই কার্ড নিতে পারবেন গ্রাহকরা।
সূত্র মতে, প্রথমে ৮টি ব্যাংক পাইলটভিত্তিতে এই কার্ড ইস্যু করবে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য ব্যাংকও ইস্যু করতে পারবে। ব্যাংকগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। তবে আজ সোনালী, ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করছে। পরবর্তীতে বাকি ৫টি ব্যাংক ইস্যু করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিসা ও মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে যেসব সেবা পাচ্ছে। একই সেবা 'টাকা পে' কার্ড দিবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ডেবিট কার্ডের লেনদেন পরিচালনা ও নিষ্পত্তির মতো প্রয়োজনীয় গ্রাহক সেবা দিতে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম (আইপিএস) থেকে দেশের ব্যাংকগুলো নিয়ে থাকে। যদিও এসব সেবা সরবরাহ করে, ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, জেসিবি, ডিসকভার এবং ইউনিয়ন পে'র মতো প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ইস্যুকৃত কার্ডের সংখ্যা ও লেনদেন বাড়ছে। এসব সেবা নিতে দেশের ব্যাংকগুলোকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ফি দিতে হয়। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার হ্রাস কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক 'ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড' চালু করার উদ্যোগ নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে জাতীয় কার্ডভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থা ছিল না। ন্যাশনাল কার্ড স্কিম 'টাকা-পে' বাংলাদেশে স্বাধীন, সাশ্রয়ী, আপামর জনসাধারণের জন্য ব্যবহার উপযোগী কার্ডভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থা করছে। এটা বাংলাদেশের পরিশোধ ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করবে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাকা-পে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক পিএলসি হতে একজন গার্মেন্টস কর্মী তার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাসিক চাঁদা প্রদান করবেন। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি হতে একজন গ্রাহক অনলাইনে পরিবহন টিকিট ক্রয় এবং দি সিটি ব্যাংক হতে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার ভাতা এটিএম হতে উত্তোলন করবেন।
এর আগে গত ২ জুন বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্ড ছিল না। এর ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। যে ফি দেওয়া হয় এটা অনেকটা বাইরে চলে যায়। আমরা ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড তৈরি করছি। সব ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এক কার্ড ব্যবহার করবে। এটার প্রচলন হলে আমরা মনে করি নগদ টাকার পরিবর্তে এই কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে।"
গভর্নর আরও জানান, এ কার্ড থাকলে গ্রাহকেরা বাংলাদেশে এটিকে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো কেনাকাটা করতে পারবেন। আবার যখন ভারতে যাবেন, তখনো এ কার্ড দিয়েই ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন।