এনবিআর’র কঠোর পেনাল্টি থেকে মুক্তি চান ব্যবসায়ীরা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগের কর্মকাণ্ডকে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর বর্তমান ও একজন সাবেক সভাপতি 'জুলুম' হিসেবে আখ্যায়িত করে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন।
বুধবার (৮ নভেম্বর) জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০২০-২১ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এফবিসিসিআইর বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম ও সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ এসব কথা বলেন।
তারা দুজনেই বলেছেন, কাস্টমস কর্মকর্তারা এইচএস কোড ইস্যুতে যেভাবে পেনাল্টি করছে সেটা বন্ধ করা না হলে শিল্পায়ন, রপ্তানি কর্মকাণ্ড থমকে যাবে।
রাজধানির ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি ছিলেন। এ কে আজাদ ট্রফি প্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। দুজন ব্যবসায়ীই বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে কাস্টমসের কর্মকাণ্ড বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রী তার বক্তব্যে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০২০-২১ পেয়েছে মোট ৭৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে স্বর্ণপদক, ২৫টি রৌপ্য ও ১৯টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
ওই অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয়ের কারণে হা-মীম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টসকে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি। ওই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ২২৩ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছিল।
৩১টি রপ্তানি খাতের ২৪৫ প্রতিষ্ঠানের আবেদন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে।
রপ্তানি বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি দিয়ে থাকে।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮০৬ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ৫৫.২৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেন।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, "সকল ব্যবসায়ীর সমস্যা এখন কাস্টমস। কাস্টমস তাদের রাজস্ব আয়ের টার্গেট অর্জন করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে জুলুম করছে। এইচএস কোড নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এটা শুধু অন্যায় নয়, মহাঅন্যায় হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "কাস্টমসের এই জুলুম থেকে যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান কিছুই হবে না।"
তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে বাণিজ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ সময় তিনি চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিরও সমালোচনা করেন। এফবিসিসিআইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, "দেশে অবরোধ, ভাংচুর হচ্ছে। এতে বিদেশে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।"
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "ব্যবসায়ীরা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কাস্টমস ভ্যাট সবক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের হয়রানি হতে হচ্ছে। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস মাথার ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এই কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কমাতে হবে।"
তিনি বলেন, "কাস্টমস এইচএস কোড নিয়ে যে ধরনের আচরণ করছে সেটা কোনোভাবেই ব্যবসাবান্ধব নয়। ২০০% থেকে ৪০০% পর্যন্ত পেনাল্টি করা হচ্ছে। এই পেনাল্টি কালচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা ব্যবসার পরিবেশ চাই।"
তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া ১৭-৮ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩৪ হাজার টাকা হয়ে গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসায়ীদের সরকার উৎসাহিত করতে চায়। সরকারের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়। এজন্য আইসিটি, চামড়া, পাট, ওষুধ, হালকা প্রকৌশলসহ যেসব খাত বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করছে তাদের থেকে আরও রপ্তানি আয় আশা করা হচ্ছে।
একক গ্রুপ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়া প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, "সরকারের নীতি সহায়তার কারণে রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হচ্ছে। সরকার নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখলে রপ্তানি খাত আরও প্রসারিত হবে।"
আরো যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার, বাদশা টেক্সটাইল, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স, নোমান টেরিটাওয়েল, আকিজ জুট মিলস, পিকার্ড বাংলাদেশ, বে ফুটওয়্যার, প্রাণ ডেইরি, কারুপণ্য রংপুর, শাইনপুকুর সিরামিকস, বেঙ্গল প্লাস্টিকস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, এনার্জিপ্যাক, মীর টেলিকম, স্কয়ার টেক্সটাইলস, এনভয় টেক্সটাইল, মমটেক্স, বিডি ক্রিয়েশন, রংপুর মেটাল, ওয়ালটন হােই-টেক, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, গোল্ডেন হার্ভেষ্ট, প্যাসিফিক জিন্স, বিআরবি কেবল, বিএসআরএম স্টীল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।