বিদেশি ঋণের সুদে কর অবকাশের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে
বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ওপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে কর অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এর আগে, গত ২৮ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ওপর ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ শতাংশ কর অব্যাহতির ঘোষণা দেয় এনবিআর।
ডলার সংকটের মধ্যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হিমশিম খেতে থাকা ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দিতেই এই কর ছাড়ের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানান, রাজস্ব বোর্ড শিগগিরই কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে।
এনবিআরের ট্যাক্স বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, এটি বলা যায় সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সরাসরি সাবসিডি। এ সুবিধা দেওয়া হলে আগামী এক বছর তারা ফরেন কারেন্সিতে নির্দ্বিধায় ঋণ নিতে পারবেন।"
এনবিআরের এমন পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরাও। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "এর আগে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তিন মাসের জন্য, তাতে খুব একটা লাভ হতো না। কেননা কেবল ওই সময়ের মধ্যে যাদের ঋণ পরিশোদের মেয়াদ হতো, তারাই হয়তো একটু সুবিধা পেতেন। এখন যদি এক বছরের জন্য এই ট্যাক্স এক্সেম্পশন দেওয়া হয়, তাতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে কিছুটা সুবিধা হবে।"
"এর ফলে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে," বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার এখন আগের লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট (এলআইবিওআর) এর পরিবর্তে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত হার সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অনুসরণ করছে।
সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন ০.২৫ শতাংশ থেকে ৫.৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকেও এই হার ১ শতাংশের নিচে ছিল। ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি ঋণ ক্ষেত্রে ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ যোগ হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সুদহার বৃদ্ধির সাথে সাথে, সুদের প্রদানের ওপর বর্তমান বাজেটে আরোপিত ২০ শতাংশ 'উইথহোল্ডিং ট্যাক্স'-এর কারণে বিদেশি ঋণ এখন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ ধরনের ঋণের খরচ এখন প্রায় ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুযায়ী, জুলাই থেকে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ২০ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল। মূলত, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের বিদেশি ঋণ নেওয়া কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বিদেশি ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমে যায়। ফলে শর্ট টার্ম ফরেন লোন কমতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা নতুন ঋণ নেওয়ার বদলে পুরনো ঋণগুলো রিপেমেন্ট করতে শুরু করেন। তবে, দেশের ব্যাংক চ্যানেলে ডলার সংকট থাকায় এসব বিদেশি ঋণ পরিশোধ রিজার্ভকে কমিয়ে দেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২.১৩ বিলিয়ন ডলার। জুন শেষে যা ছিল ১৩.৬৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত কয়েক মাসে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর একটি কারণ হলো, বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণ কমে যাওয়া।"