বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ১৩৪টি নতুন পোশাক ইউনিট স্থাপন হলো
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাতের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা গত বছর প্রায় ১৩৪টি নতুন তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনে এগিয়ে এসেছেন।
এই বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই নতুন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যারা নিজেদের ব্যবসার পরিসর আরো বাড়াতে চান। এ বছরের মধ্যেই এসব কারখানার বেশিরভাগই উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পোশাক প্রস্তুতকারকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বিশ্বের বড় বড় ক্রেতারা চীনের বাজার থেকে সরে এসে অন্যান্য দেশের বাজার, বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারগুলোর প্রতি ঝুঁকছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক কারণেও ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) মেম্বারশিপের তথ্যমতে, বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, সাদমা গ্রুপ এবং বেক্সিমকো তাদের রপ্তানিযোগ্য পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে ২০২৩ সালে বিনিয়োগ করেছে।
বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা মিয়া জানান, বছরে ৭০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যে একটি অত্যাধুনিক ইউনিট স্থাপন করার জন্য বাদশা গ্রুপ হবিগঞ্জের মাধবপুরে তার পাইওনিয়ার ডেনিমে ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় তারা উৎপাদন ইউনিট হিসেবে সাততলা বিশিষ্ট দুটি ভবন, স্টোরেজ সুবিধার জন্য দুটি শেড এবং ডাইং ও ওয়াশিং প্লান্টের জন্য তিনটি শেড নির্মাণ করছে।
গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য নির্ধারিত পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখানে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বাদশা মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০২৪ সালে এই ইউনিটে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন শুরু হবে। এ কারখানায় কমপক্ষে ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে গ্রুপটি প্রায় ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।"
তিনি বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে বছরে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের।
পাইওনিয়ার ডেনিমের এইচআর, অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান মো. খায়রুল আলম রাব্বি টিবিএসের সাথে আলাপকালে জানান, তারা গত বছর বিজিএমইএ সদস্যপদ পেয়েছেন।
প্যাসিফিক জিন্সও চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্যাসিফিক অ্যাটায়ারস লিমিটেডে ৩১.৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, নতুন কারখানাটি স্যুট, ব্লেজার, জ্যাকেট, কোট, প্যান্ট এবং ক্যাজুয়ালওয়্যারের মতো দামি পোশাক তৈরি করবে।
তিনি বলেন, "এই নতুন ইউনিটটি আগামী তিন বছরে ৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। পুরোপুরি চালু হলে এখান থেকে আমাদের রপ্তানি ২৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়বে।''
বিনিয়োগের তালিকায় রয়েছে নেতৃস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপও।
এর আগে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ জানিয়েছিলেন, তারা ২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনটি উৎপাদন লাইন নিয়ে প্রকল্পটি শুরু করেছিলেন। তাদের এই সক্ষমতা ১৬ লাইনে সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি জানান, গার্মেন্টসের সক্ষমতা বাড়ানোর চেয়ে তারা বৈচিত্র্যের দিকটি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সাদমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন জানান, ২০২৩ সালে তারা বিজিএমইএ তে তিনটি স্থায়ী সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন।
গ্রুপটির নিট কম্পোজিট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অ্যাপারেল তিন হাজার লোককে নিয়োগ দেবে এবং মৌচাক অ্যাপারেল আরও দুই হাজার লোক নিয়োগ করবে।
নাসির উদ্দিন আশা করেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রুপের মোট জনবল হবে ১৮ হাজার এবং এর টার্নওভার ২৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। গ্রুপের বর্তমান টার্নওভার ১০০ মিলিয়ন ডলার।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গত দুই বছরে বেক্সিমকো গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কারখানার সদস্যপদ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "রপ্তানি বৃদ্ধি বাড়াতে বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরির জন্য আমরা আমাদের সদস্যদের উচ্চ প্রযুক্তির কারখানায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছি।"
তিনি বলেন, কম চাহিদা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি গতি পাচ্ছে। শিল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির ভিশন নিয়ে আগাচ্ছে।
তিনি জানান, ২০২২ ও ২০২৩ সালে মোট ২৭৮টি কারখানা বিজিএমইএর স্থায়ী সদস্য হয়েছে এবং ৩১৬টি কারখানা অস্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে।