অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকার ঘাটতির মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সূত্র জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আদায় করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে অর্থনীতিতে কিছুটা গতিমন্থরতা চলছে। এর সঙ্গে ডলার সংকটে আমদানি নিরুৎসাহিত করার কারণে আমদানি কমেছে, যার কারণে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হয়নি। এছাড়া এনবিআরকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি দেওয়া হয়েছে, যার কারণে বড় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ্য গবেষণা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'ভুল অ্যাসাম্পশনের ভিত্তিতে এনবিআরকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী টার্গেট দেওয়া হয়েছিলো। যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বড় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।'
'এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি সংশোধন করে কমিয়ে আনতে হবে।'
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ টিবিএসকে বলেন, 'অতীতের বছরগুলোর মতো চলতি বছরও বিশাল বাজেট দিতে গিয়ে বড় রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। যার কারণে বড় গ্যাপ মনে হচ্ছে।'
তবে তিনি মনে করেন, এনবিআর আরও বেশি হারে রাজস্ব আদায় করতে পারা উচিত ছিল।
ডলার সংকট এবং টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তি মূলত আমদানির হ্রাস-বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়।
এর ফলে আমদানি শুল্ক আদায়েও প্রত্যাশিত গতি নেই। গত ছয় মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ, যা মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর সার্বিকভাবে গত ছয় মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৪ শতাংশ, যা মূলত গত বছর কিছু পণ্যের কর বাড়িয়ে দেওয়া এবং মূল্যস্ফীতির কারণে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। সেই হিসাবে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি ছয় মাসে আদায় করতে হবে ৬২ শতাংশ রাজস্ব।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে রাজস্ব আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। তবে এটি আদায় চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা চ্যালেঞ্জ হবে। তবে আমরা কিছু স্ট্র্যাটেজি নিচ্ছি এবং আমরা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।'
চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের আদায়ের তুলনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এনবিআরের রাজস্বের প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন প্রায় ৩০ শতাংশ। এনবিআরের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর কোনো বছরই বাংলাদেশ এত বেশি হারে রাজস্ব আদায় হয়নি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সংস্থাটির রাজস্ব আদায় বেড়েছে গড়ে ১১ শতাংশেরও কম হারে।
বড় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্বে ঘাটতি হওয়ায় সরকারের ব্যাংকঋণও বেড়েছে। অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেখা দিয়েছে গতিমন্থরতা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্যানুসারে, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ, যা গত ছয় বছরে একই সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি শুল্ক আদায় বেড়েছে ৯ শতাংশের কিছু বেশি। একই সময়ে ভ্যাট ও আয়কর আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ১৬ শতাংশ হারে।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালন করবে এনবিআর
২৬ জানুয়ারি শুক্রবার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে এনবিআর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে এক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ওই সেমিনারে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দিবসটি উপলক্ষে এনবিআরের কার্যক্রম তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান।