মৌসুমেও নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ টাকায়
মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে বাজারে আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুদিনের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে ১০০ টাকায় উঠেছে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ানবাজার সহ খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল খুচরায় ৯০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।
বাড্ডার মুদি দোকানি মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দুদিন ধরে (রবি ও সোমবার) পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ওই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন দাম অনুযায়ী ১০০ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।'
টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্যমতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের বর্তমান মূল্য ১৫৩ শতাংশ বেশি।
কারওয়ানবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। সে কারণে পাবনা, ফরিদপুরের মতো এলাকার পাইকারী বাজারগুলোতে দাম বেড়েছে।
কারওয়ানবাজারের পাইকারী বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৮৫-৯০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে, যা দুদিন আগে ছিল ৭৬-৭৮।
কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের আড়তদার মো. আশরাফুল টিবিএসকে বলেন, 'মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে, যে কারণে ঢাকার বাইরের পাইকারী বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদেরও বাড়াতে হয়েছে।'
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। এই পেঁয়াজ যখন বাজারে আসতে শুরু করে, তার ঠিক আগের বাজারে পণ্যটির দাম ওঠে ২২০ টাকা পর্যন্ত। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের বাজারে রাতারাতি দাম বেড়ে যায়। পণ্যটির এই উচ্চমূল্য কমিয়ে আনতে বড় ভূমিকা রাখে মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
পেঁয়াজ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় হাব হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর ও পাবনা জেলা। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, 'মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন শেষের দিকে। অন্যদিকে মূল পেঁয়াজ মার্চ-এপ্রিলের দিকে বাজারে আসতে শুরু করবে।'
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৮ লাখ টন। এই পেঁয়াজ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু এবার বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া হওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে বিক্রির একটা প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে জানুয়ারির শেষভাগেই মূলত সরবরাহ কমতে শুরু করেছে।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরেই পেঁয়াজের আমদানি পরিস্থিতি ভালো নয়, যদিও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সরবরাহ সংকট মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
অন্যদিকে যে পেঁয়াজটা সারা বছরের জোগান হিসেবে ব্যবহার হয়, সেটা রোপণই করা হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে, যা বাজারে আসতে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল সময়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬.৭৩ লাখ টন। গত বছর উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ, যেখানে ২৫ শতাংশ 'পোস্ট-হার্ভেস্ট' লস বিবেচনায় নিয়ে মূল উৎপাদন হিসাব করা হয়েছিল ২৫.৪৯ লাখ টন। আর দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন, যা দিয়ে চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ হয়।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে নতুন পেঁয়াজ আসার আগে ভারতের বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ডিসেম্বরে ট্যারিফ কমিশন তাদের এক প্রতিবেদনে ভারতের বিকল্প হিসেবে মিশর, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও মালয়েশিয়া থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করে।