ইউয়ানে বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশে চীনা ব্যাংক চালুর আহ্বান ঢাকার
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ইউয়ান ব্যবহারের সুবিধার্থে বাংলাদেশে একটি চীনা ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে চীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জন্য চীনের বাণিজ্য সহজ করতে চীনা মুদ্রাকে সরকার অফিশিয়াল মুদ্রা হিসেবে গত মাস থেকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই চীন সরকারের প্রতি আহ্বান, ব্যাকিং চ্যানেল সহজ করতে চীনের একটি ব্যাংকের কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে চালু করা হোক।'
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও চায়না বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিআই) জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে দেন বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর অ্যান্ড ডেপুটি চিফ অভ মিশন ইয়ান হুয়ালং, এফবিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম, বিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা, সেক্রেটারি আল মামুন মৃধা ও ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্ল্যা মৃধা প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্যের সংযোগস্থল হতে পারে উল্লেখ করে আহসানুল ইসলাম বলেন, 'চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৈষম্যর ফারাক অনেক বেশি—প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য। এই ব্যবধান কমাতে দেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে তৈরি পণ্য আবার রপ্তানি করে এই বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব।'
তিনি আরও বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার সমস্যা চিহ্নিত করে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য অর্জন করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি-রপ্তানি করে, ব্যবসাসহায়ক নীতি নিয়ে কাজ করে। এই নীতির মাধ্যমে ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। বিশেষ করে রমজানের পণ্য নিয়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেল, ছোলা, চিলি, ডাল, পেঁয়াজ এসব পণ্যর শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সুপারিশ করা হয়েছে।
'প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে একমত। আমাদের আশা, এসব পণ্যে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকবে,' বলেন তিনি।
আহসানুল ইসলাম বলেন, 'রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এরইমধ্যে আরও কিছু পণ্যেও আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া আছে। আশা করছি, রমজানে ভোক্তাদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।'
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন ১৮ লাখ টন চাল মজুদ আছে। আরও ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে। রোজায় বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
'আমরা শুধু উৎপাদন, আমদানি ও সবরাহ পর্যায়ে কিছু কাজ করছি। সেগুলোর জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে,' বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ৯০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি থেকে বাংলাদেশ এখন ৪৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। এর ধারাবাহিকতায় দেশ এখন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
'বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে চায়না চেম্বারকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।
বিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মূর্তজা পাপ্পা বলেন, 'আমরা ইআরএফের সঙ্গে নিয়মিত অ্যাওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছি। এটি দেশের মানুষের কাছে, বিশেষ করে সাংবাদিকেদের কাছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।'
অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড-এর চিফ রিপোর্টার আব্বাস উদ্দিন নয়ন ও জাহিদুল ইসলামসহ ১৫ জন সাংবাদিকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
এ বছর বিসিসিআই-ইআরএফ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডের জন্য পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৬৮টি প্রতিবেদন জমা পড়েছিল। ছয় সদস্যের জুরি বোর্ডের দেওয়া নম্বরের ভিত্তিতে চারটি ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ১২ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।
আরেকটি ক্যাটাগরিতে একজন করে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন, তবে তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন যৌথভাবে তিনজন। মোট ১৭ জন সাংবাদিক পাঁচ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তুলে ধরতে ২০২০ সালে বিসিসিআই ও ইআরএফ যৌথভাবে এই পুরস্কারটি চালু করে।