জুলাই–জানুয়ারি সময়ে রেকর্ড নিম্ন ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হার
চলতি অর্থবছরের অর্ধেকের বেশি সময় চলেও গেলেও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি নেই। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
এডিপিতে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।
অথচ গত অর্থবছরের সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের সময়েও (যখন অনেক প্রকল্পে অর্থ ছাড় বন্ধ ছিল) জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
আইএমইডি'র সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দে অর্থ ছাড় করছে না সরকার । "যেসব প্রকল্পে এখনই বাস্তবায়ন না করলে সমস্যা হবে না, বা কম গুরুত্বপূর্ণ সেখানে ধীর গতিতে অর্থছাড় করছে অর্থবিভাগ। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে, কর্সংস্থান হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে– সেসব প্রকল্পে অর্থ ছাড় বন্ধ নেই।"
অর্থবছরের বাকি সময়ে অর্থ ছাড়ের গতি বাড়বে এবং বাস্তবায়ন হারও বাড়বে বলে আশা করেছেন আইএমইডি সচিব।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, শুধু বরাদ্দই কম হচ্ছে না, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোও ধীর গতিতে অর্থব্যয় করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ডলার সংকট, নির্মাণ সামগ্রিক উচ্চ মূল্যের কারণে অর্থব্যয়ে আগ্রাহ কম দেখা যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা, আর বৈদেশিক উৎস থেকে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোর নিজস্ব অর্থায়নসহ এডিপির সামগ্রিক আকার প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত এডিপিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের অংশ ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি সহায়তার অংশ ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এর আগে গত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএফ) এর নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেছিলেন, চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন নানামুখী প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। এরমধ্যে সরকারের কর রাজস্ব কমে আসাসহ উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো নানাবিধ আর্থিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে মাঠ পর্যায়ে কাজে গতি ছিল না। বিল পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল ঠিকাদারদের মধ্যে। এছাড়া নির্বাচনের সময়ে সরকারের তদারকি কম থাকার কারণেও এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে।
বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত এমন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন মুজেরী, এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিতে বলেছেন।