এমডি নিয়োগে খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়ে কর্মসম্পাদন সূচক বিবেচনার নির্দেশ
খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হওয়া যাবে না। ব্যাংকের নতুন এমডি বা প্রধান নির্বাহী নিয়োগে খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়ের পারদর্শিতাকে বিবেচনায় রাখার নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি একজন এমডির বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের সময় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যুক্ত করতে হবে। সময়ে সময়ে এর অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করতে হবে।
একইসাথে ওই পদে নিযুক্ত ব্যক্তির কর্মমূল্যায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি বিধানের তথা অন্যান্য কর্মসম্পাদন সূচক/নির্দেশক (পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরস) যুক্ত করতে হবে। আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময় সময় যে সকল বিশেষ দায়িত্ব বা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হবে তাও কর্মসম্পাদন সূচক– এ যুক্ত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন একজন এমডি তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে– ভবিষ্যতেও তাঁকে দায় নিতে হবে। এরকম বিধান আগে ছিল না। তাছাড়া আগে এমডি নিয়োগে সর্বনিম্ন বয়স কত হবে– তারও কোনো নির্দেশনা ছিল না। ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাইয়ের আগে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি লাগবে, এবং এমডিসহ সব কর্মকর্তার উৎসব বোনাস ১৫ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না।
ব্যাংকের কোনও পরিচালকের ছেলে-মেয়ে ওই ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাবেন না। অর্থাৎ যিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন– সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না। শুধু তাই নয়, যিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন, তিনি অন্য কোনও ব্যবসায়ে বা পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে তাঁর কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত থাকতে পারবে না। একইভাবে ব্যাংকের কোনও পরিচালকের মালিকানাধীন বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর কোনও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, যিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন, তিনি কোনও ফৌজদারি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি হবেন, যার সম্পর্কে কোনও দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে কোনও বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য নেই।
এছাড়া তিনি কোনও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিধিমালা, প্রবিধান বা নিয়ামাচার লঙ্ঘনজনিত দণ্ডিত হতে পারবেন না। তিনি এমন কোনও কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যার নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে অথবা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানটি অবসায়িত হয়েছে। তিনি এমন কোনও কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত ছিলেন না– যার নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স তার সরাসরি বা পরোক্ষ অপরাধজনিত কারণে বাতিল করা হয়েছে। তিনি অর্থ-আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনও কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা পরিচালক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকাকালীন স্বীয় পদ হতে অপসারণ/বরখাস্ত/অবনমিত হননি বা অব্যাহতি প্রাপ্ত হননি।
কোনও ব্যাংক-কোম্পানি বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যান বা পরিচালক বা কর্মকর্তা বা অন্য কোনও পদে আসীন থাকা অবস্থায় তাকে স্বীয় পদ হতে অপসারণ/বরখাস্ত/অবনমিত করা হয়নি বা অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট বা অনসাইট পরিদর্শনে যার বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ পর্যবেক্ষণ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিনি হবেন, তাঁকে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণের জন্য খেলাপি হওয়া যাবে না। তিনি পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ বন্ধ করেননি, কিংবা পাওনাদারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় হতে অব্যাহতি লাভ করেননি। তিনি কর খেলাপি নন। তিনি কোনও সময় আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হননি। তিনি ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বীয় পেশায় দায়িত্ব পালনকালে কোনোরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না।