ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক না হলে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে
কোন গ্রুপভুক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক না হলে তার অধিভুক্ত অপর প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানিকে ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ দিতে হবে।
গতকাল (বুধবার) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক নয় তাদের এমন সুবিধা প্রদানের কথা বলেছে। অবশ্য ব্যাংকগুলো কীভাবে একই গ্রুপভুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে থেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক শনাক্ত করবে তা নিয়ে জটিলতায় ভুগছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৭ ধারা বলছে, কোন গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি খেলাপি গ্রাহক হয় এবং তার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় যুক্তিসংগত কারণ থাকে তাহলে ঐ গ্রুপভুক্ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না। এরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।
সার্কুলারে বলা হয়, কোন ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন গ্রাহককে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক হিসেবে চূড়ান্ত করলে তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপিল করতে পারেন। উক্ত আপিল নিষ্পত্তি না হলে তার অপর কোন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট আবেদন করা যাবে না।
শরিয়াভিত্তিক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোন গ্রাহক যুক্তিসংগত কারণে খেলাপি হয়েছে তা শনাক্তকরণ জটিল প্রক্রিয়া। সব গ্রাহকই বলবে তার খেলাপি হওয়ার পেছনে যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এমন খেলাপি গ্রাহককে নতুন করে ঋণ বিতরণ করলে ব্যাংকখাতে ঋণ সুশাসনে আরও জটিলতা তৈরি হবে।"
তিনি মনে করেন, অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি ঋণের শ্রেণিকরনে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। কারণ তারা খুবই পাওয়ারফুল বলে তাদের খেলাপি করা যায় না। সেক্ষেত্রে ওই গ্রাহককে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকের তালিকায় আনা অনেক জটিল বিষয়।
আরেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আগে ব্যাংকগুলো কোন গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে তার অধিভুক্ত অপর প্রতিষ্ঠান ঋণ দিত না। এখন এটাকে আরও সহজ করে দিয়ে সে অনিচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক হলেও পুনরায় ঋণ পাবে। যার কারণে ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।"
তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ পরিশোধে সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয় তাহলে তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকের তালিকায় পরবেন।"
তিনি প্রশ্ন করেন, "এখানে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা কীভাবে ঐ প্রতিষ্ঠান যে ঋণ পরিশোধে সামর্থ্য ছিল তা অ্যাসেসমেন্ট করবে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এই জায়গা আরও স্পষ্ট করা।"
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ১২ মার্চ তফসিলি ব্যাংকগুলিকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক শনাক্তকরণ ইউনিট গঠনের জন্য ব্যাংকগুলোকে সার্কুলার ইস্যু করে নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপিদের যাচাই-বাছাই ও চিহ্নিত করতে পারে।
এই ইউনিটগুলি 'ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের শনাক্তকরণ ইউনিট' নামে পরিচিত হবে। যার দায়িত্ব দক্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত থাকবে। যারা ব্যাংকগুলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিচে দুই পদের বেশি নয়। একইসাথে সার্কুলারটিতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করার পদ্ধতিও বর্ণনা করা হয়েছে।