তৃতীয় প্রান্তিকেও এডিপির অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে নৌ পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১,৫৮৯ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষ হলেও (জুলাই-মার্চ) সংস্থাটি বরাদ্দের মাত্র ২২.৬৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে।
শুধু এই সংস্থাই নয়, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্থা তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাদ্দের ৩০.৬৮ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ তার বরাদ্দের ৩১.৬৭ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৩২.৯৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সরকারের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) আওতায় বরাদ্দের অর্ধেক অর্থও ব্যয় করতে পারেনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো আরএডিবি বরাদ্দের ২৫৪৩৯১.৬৪ কোটি টাকার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যয় করেছে ১০৭৬১২.৪৫ কোটি টাকা, যা মোট আরএডিবি বরাদ্দের ৪২.৩০ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে আরএডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪১.৬৫ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৫.০৫ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতির কারণে অর্থবছরের শেষে দিকে অর্থ ব্যয়ে চাপ বাড়বে বলে মনে করছে আএইএমইডি। শতভাগ আরএডিবি বাস্তবায়ন করতে হলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে ব্যয় করতে হবে ১৪৬৭৭৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, "এডিপি বাস্তবায়নে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরু দিকে অর্থ ব্যয় হয় না। ফলে শেষের দিকে অর্থ ব্যয়ের চাপ বাড়ে। বরাদ্দের ৬০ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় হতে দেখা যায় অর্থবছরের শেষ তিন মাসে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা অভাবে এটি হয়ে আসছে।"
"এছাড়া সরকারের এডিপির আকার বাড়লেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়েনি। শেষদিকে তড়িঘড়ি করে অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে কাজের শুণগত মান থাকে না আবার অপচয় ও দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকে," বলেন তিনি।
আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরকারি তহবিল বরাদ্দের ৬৪.৭০ শতাংশ ব্যয় করেছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। চলতি অর্থছরের একই সময়ে এই হার কমে হয়েছে ৬৩.৪৮ শতাংশ।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থছাড় করছে না সরকার। যেসব প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন না করলে কোনো সমস্যা হবে না বা কম গুরুত্বপূর্ণ— এমন প্রকল্পে ধীর গতিতে অর্থছাড় করছে অর্থবিভাগ।
তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প– যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে, কর্সংস্থান সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে– সেসব প্রকল্পে অর্থছাড় বন্ধ নেই। এ কারণে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ে ধীর গতি রয়েছে।
এদিকে, বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টদের মতে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ার প্রভাবে এই হার বাড়ছে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বৈদেশিক তহবিলের ৩২.৮২ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৩১.৪৯ শতাংশ।
এদিকে আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে একমাত্র বিদ্যুৎ বিভাগ ৫০ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। মার্চ পর্যন্ত এ সংস্থাটির ব্যয়ের হার ৬৩.৮৭ শতাংশ।
এছাড়া, রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৫৩.৯৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৫০.১৩ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে।