৮ মে’র মধ্যে রিজার্ভ বৃদ্ধির ‘কর্ম পরিকল্পনা’ চেয়েছে আইএমএফ
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ কম— এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একইসঙ্গে, রিজার্ভ কীভাবে বৃদ্ধি পাবে, তার 'যথাযথ কর্ম পরিকল্পনা' আগামী ৮ মে এর মধ্যে চেয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বাংলাদেশকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় আইএমএফ প্রতিনিধিদের। সেই সভায় আইএমএফ এমন পর্যবেক্ষণ জানান।
সভায় উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ছিল নেট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১৯.২৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু মার্চ শেষে দেশের নেট রিজার্ভ ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২৪ এপ্রিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপিএম-৬ অনুযায়ী রয়েছে ১৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও এখান থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)-এর পাওয়া পরিশোধের পরিমাণ ও রিজার্ভ থেকে ঋণ এবং 'শর্টটার্ম লাইএবিলিটি' বা স্বল্পমেয়াদী দায়গুলো বাদ দিলে নেট রিজার্ভ দাড়াবে ১৪.০৭ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, আইএমএফের শর্তানুযায়ী আগামী জুন ২০২৪ সালে রিজার্ভের লক্ষ্য রয়েছে ২০.১০ বিলিয়ন ডলার। সামনের দিনগুলোতে দেশের রিজার্ভ কীভাবে বাড়বে তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে আন্তর্জাতিক এই দাতাসংস্থা।
"এক্ষেত্রে আগামী বৈঠকের (৮ মে) আগেই এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে," যোগ করেন তিনি।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, "রিজার্ভ ধরে রাখায় ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ভুল নীতি ছিল জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া, রিজার্ভের পাশাপাশি খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশে কোনো গড়মিল রয়েছে কিনা সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। একইসঙ্গে মামলায় আটকা, পুনঃতফসিল ও অবলোপনকে ব্যাংকের খারাপ সম্পদ হিসেবে গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "আজ আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের রিজার্ভ ও রেভিনিউ এবং মেক্রো ইকোনোমিকর (সামষ্টিক অর্থনীতি) বিভিন্ন সূচক তুলে ধরেছি।"
তিনি বলেন, "এসব সূচকে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা কেমন ছিল সেগুলোও দেখানো হয়েছে। আমরা আমাদের সার্বিক সূচকগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেছি।"
বৈঠকে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ে খেলাপিদের বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সুবিধা দিচ্ছে কিনা তাও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। যদি খেলাপিদের ব্যাপারে কোন উদারতা দেখানো হয় সেগুলোও বাদ দিতে বলা হয়েছে।
"এছাড়াও, দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি অর্থপাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য ও পাচার ঠেকাতে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানায় তারা," বলেন তারা।
আইএমএফের ঢাকায় সফররত দল তাদের মধ্যবর্তী পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৩ দফায় বৈঠক করেছে। এছাড়াও একীভূতকরণ নীতিমালা নিয়ে নীতি উপদেষ্টা (পলিসি অ্যাডভাইজার) আবু ফরাহ নাসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে।
এর আগে, রোববার (২৮ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশের ব্যাংকগুলোর সমস্ত খেলাপি ঋণ ও খারাপ সম্পদের তথ্য সম্পূর্ণরূপে প্রকাশের সুপারিশ করে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা গ্রাহকদের সামনে প্রকাশের সুপারিশ করে তারা।