আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন চালু করতে কারেন্সি সোয়াপ বন্ধ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন চালু করতে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা উদ্বৃত্ত ডলার জমা রেখে টাকা দেওয়া, অর্থাৎ কারেন্সি সোয়াপ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়াও রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের তহবিল থেকে কোনো প্রণোদনা দিতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (৮ মে) বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নির্দেশনা দিয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আরএফ হোসেন।
সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন থেকে নিজেরা কোনো প্রণোদনা দিতে পারবে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে এবিবি ও বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর নিজেদের তহবিল থেকে রেমিট্যান্সের ডলারে সর্বোচ্চ ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো চাইলে তাদের উদ্বৃত্ত ডলার আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করতে পারবে জানিয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের রেট এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে যে বেঞ্চমার্ক রেট ঠিক করে দিয়েছে, সেটি বাজারের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।
'তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন কারেন্সি সোয়াপ করে টাকা নেওয়ার বদলে ইন্টারব্যাংকে ডলার বিক্রি করবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। এতে ইন্টারব্যাংক ডলার মার্কেট সচল হবে,' বলেন তিনি।
ব্যাংকাররা জানান, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এবিবি ও বাফেদার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া চালু করার পর থেকে আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন ডলারের দাম বাজারদরের কাছাকাছি আসায় এখানে লেনদেন আবার চালু হতে পারে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, 'ডলারের রেট বাড়ানোর কারণে আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন চালু হওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন চালু হলে ব্যাংকগুলোকে আর ডলারের জন্য এক্সচেঞ্জ হাউজের কাছে যেতে হবে না, অন্য ব্যাংকের কাছে থেকেই ডলার কিনতে পারবে তারা।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা থাকা ডলারের বকেয়া রয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার। এসব ডলার জমা রেখে ১১০ টাকা রেটে টাকা নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন মেয়াদে এসব ডলার জমা রেখেছে। মেয়াদ শেষ হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব ডলার ফিরিয়ে নেবে।
সভায় উপস্থিত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা রেখে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিয়েছে। কারেন্সি সোয়াপ বন্ধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ওই টাকা তুলে ফেলতে চাইছে। এর ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ আরও কমবে।
তিনি আরেও বলেন, এক্সচেঞ্জ রেটের সার্কুলারে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কী রেটে ডলার কেনাবেচা করবে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী দামের সঙ্গে ১ টাকা যোগ-বিয়োগ করে ডলার কেনাবেচা করতে বলা হয়েছে। সে হিসাবে ব্যাংকগুলো এখন থেকে ডলার কেনাবেচা করবে ১১৬-১১৮ টাকা রেটে।