২০২৪–২৫ অর্থবছরে ২.৫ শতাংশ বাড়তি করপোরেট কর দিতে হতে পারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে
নগদবিহীন বা ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা অবলম্বন না করলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আগামী অর্থবছরে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ করপোরেট কর দিতে হতে পারে। বর্তমানে সরকার ক্যাশলেস সমাজ তৈরির দিকে ঝুঁকছে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে ১০ শতাংশের বেশি ফ্রি ফ্লোট (লেনদেনযোগ্য) শেয়ারসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ২০ শতাংশ করপোরেট কর প্রদান করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, সরকার ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ হার বাড়িয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে।
১০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্লোটসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করের হার বর্তমান সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ শতাংশ হবে।
তবে পাবলিকলি ট্রেড করা কোম্পানিগুলো যদি নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত মেনে চলে, অর্থাৎ নগদ লেনদেন বছরে ৩৬ লাখ টাকার মধ্যে বজায় রাখে, তাহলে আগের হারেই কর দিতে পারবে এগুলো।
রাজস্ব নীতি প্রণয়ন বিষয়ে জ্ঞাত কর্মকর্তাদের মতে, অ-তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি বর্তমানে সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট কর দেয়, সেগুলো যদি নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত মেনে চলে তাহলে তাদের এ হার আড়াই শতাংশ কমানো হবে।
একই সুবিধা এক-ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ শর্তপূরণ সাপেক্ষে এগুলোর করপোরেট করের হার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি মাসের শুরুতে এটির বাজেট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ জুন সংসদে তার বাজেট উপস্থাপনে প্রস্তাবটি অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন কোম্পানি বাজারে প্রবেশে নিরুৎসাহিত হতে পারে
দীর্ঘদিন ধরে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানোর পক্ষে কথা বলে আসছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নতুন এ পদক্ষেপ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করবে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, এটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট করের বর্তমান সাড়ে সাত শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে সুবিধা সংকুচিত করবে।
উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী নেতারা
ব্যবসায়িক নেতারা করপোরেট করের হার বৃদ্ধি এবং শর্তসাপেক্ষে কম হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের যুক্তি, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বেশিরভাগ কোম্পানি এ প্রণোদনা থেকে উপকৃত হতে পারবে না।
এ ধরনের বিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে এনবিআর এটির কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করছে। ফলে হয়রানি বাড়া এবং দুর্নীতির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রণোদনা দিলে শর্ত না মেনেই সুবিধা উপভোগের সুযোগ তৈরি হতে পারে, কারণ কর কর্মকর্তাদের এসব সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
তবে স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং-এর একজন অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, সরকার সুবিধার অপব্যবহার রোধ করতে এ পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ এটি প্রদানের আগে ডেপুটি ট্যাক্স কমিশনারদের দ্বারা পর্যালোচনা প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে। এ পদক্ষেপ ক্যাশলেস সমাজে উন্নীত হতে সাহায্য করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রসারেও এটি অবদান রাখবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রহমান টিবিএসকে বলেন, কর হ্রাস শর্তসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয়। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানি এসব সুবিধার জন্য যোগ্য নাও হতে পারে।
'কর দেওয়া একজন নাগরিকের দায়িত্ব,' তিনি বলেন। ২৫০ বেসিস পয়েন্ট কর সুবিধা পেতে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার অফলোড করার মতো শর্ত আরোপ পুঁজিবাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বড় কোম্পানির জন্য 'অবাস্তবিক'?
রিজওয়ান রহমান উল্লেখ করেন, বড় কোম্পানিগুলোর জন্য নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত পূরণ করা বা বার্ষিক নগদ লেনদেনের সীমা ৩৬ লাখ টাকা বজায় রাখা অবাস্তব।
তিনি বলেন, যদি সরকারি অফিসগুলো নগদবিহীন লেনদেন অবলম্বন করে, তাহলে তা একটি ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে এবং বেসরকারি খাতও এটি অনুসরণ করবে।