এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৯.৯০%, পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
চলতি বছরের এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের তুলনায় ০.৫৯ বেসিস পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৯০ শতাংশ, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ব্যাংকাররা বলছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৪৯ শতাংশ, যা ওই সময়ে নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১০ শতাংশ। মার্চে প্রবৃদ্ধি সেই তুলনায় বেশি হলেও এপ্রিলে এসে কমেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মার্চে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এপ্রিল মাসের দুই-তৃতীয়াংশ ঈদ-পরবর্তী সময় হওয়ায় এ মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
তিনি বলেন, 'দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারের মন্থর গতির কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ কম করছেন। এছাড়া ঋণের সুদ বেড়ে ১৪ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হারকেও বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।'
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, 'ধারবাহিকভাবে ডলারের রেট বাড়ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করার ক্ষেত্রে নানা হিসাব করছেন। যার কারণে প্রবৃদ্ধি কমছে।'
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের গত দুইবারের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা করেছে। এর ফলে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কম।
'মার্চে রমজানের কারণে খাদ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। সে কারণে এই মাসে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেশি ছিল। এপ্রিলে কমেছে, কারণ এই মাসের প্রায় ২০ দিন ছিল ঈদ-পরবর্তী সময়। সে কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদাও কম ছিল।'
একটি সরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি এলসিতে মার্জিন আরোপ করায় গত দুই বছরে আমদানি ব্যাপক কমেছে। এখন প্রতি মাসে এলসি খোলা হচ্ছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি মাসে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার করে এলসি খোলা হয়েছে। সে কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে কমেছে ৪.২৩ শতাংশ ও ১৩.৯৩ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫১.৪৮ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪.৩১ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি ২৫.৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮৫ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিষ্পত্তি ২৫.০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৪৩ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৬২ শতাংশ। এরপর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তবে অক্টোবরে কিছুটা বেড়ে ১০.০৯ শতাংশ হয়েছিল; এরপর ফের নভেম্বরে কমে যায়। যদিও ডিসেম্বরে নভেম্বরের তুলনায় মার্জিনাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলমান মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ধরনের অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা জুনের জন্য কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১১ শতাংশ। এছাড়া, সর্বোপরি অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯.৭ শতাংশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার আগপর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭৪ শতাংশ।
কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে বেসরকারি খাতের ঋণের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম। কারণ হচ্ছে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। এছাড়া গত দেড় বছর ধরে দেশের আমদানির প্রবৃদ্ধিও কম রয়েছে।