উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে বাজেট সহায়তা দ্বিতীয়বারের মতো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াচ্ছে
দ্বিতীয়বারের মতো কোনো একক অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এর আগে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার সর্বোচ্চ ২.৫৯৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নিয়েছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইআরডির তথ্য বলছে, এ মাসেই বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছে। ঋণচুক্তি সই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সহায়তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১.২৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ৫০০ মিলিয়ন দেবে বিশ্বব্যাংক, ৪০০ মিলিয়ন দেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ১০০ মিলিয়ন ডলার দেবে দক্ষিণ কোরিয়া।
এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে এডিবির সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং কোরিয়ার সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়। এছাড়া, ২০ মে তারিখে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি)-এর সাথে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত হয়।
সব মিলিয়ের চলতি অর্থবছরে মোট বাজেট সহায়তার পরিমাণ হবে ২.০৬ বিলিয়ন ডলার।
মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব আহরণের মাঝের ফাঁক পূরণে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নেয় সরকার।
কোভিডের সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছালেও বর্তমানে তা কমে আইএমএফের রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি পিপিএম-৬ অনুযায়ী ১৮.৭২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়নের মতো। রিজার্ভ সংকট মোকাবেরায় সরকার চলতি অর্থবছরজুড়ে আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সরকার গত অর্থবছর (৩০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত) মোট ১১.০৯ বিলিয়ন বাজেট সহায়তা নিয়েছে। মূলত কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে টিকা কেনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের বাজেট সহায়তার পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও বাজেট সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করেছিল সরকার।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১.৭৬৯ বিলিয়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২.৫৯৭ বিলিয়ন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১.০৯ বিলিয়ন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নেয় সরকার। এর আগের অর্থবছরে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ০.২৫১ বিলিয়ন ডলার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ডা. ফাহমিদা খাতুন বলে, "আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে অবস্থায় আছে, সরকারের হাতে বাজেটারি সাপোর্ট নেওয়ার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এটি পরিশোধ নিয়ে।"
"উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তা ভালো। কিন্তু সমস্যা হল আমরা কীভাবে এটি ব্যবহার করব। এই অর্থ কার্যকরী উপায়ে এবং দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে হবে, যেন এ থেকে ভাল রিটার্ন নিশ্চিত যায়" বলেন তিনি।
এডিবর ২৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, মিলিয়ন ডলারের 'সেকেন্ড স্ট্রেথেনিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম' (সাবপ্রোগ্রাম-১) শীর্ষক ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ প্রস্তাব এডিবির বোর্ড সভায় উত্থাপন হচ্ছে আজ বুধবার (৫ জুন)।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ইআরডির বোর্ড সভায় অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি সই হবে।
ইআরডি কর্মকর্তারা আরও জানান, এডিবির এই বাজেট সহায়তার সঙ্গে একই প্যাকেজে ১০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা দেবে কোয়িয়া। এডিবির সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হওয়ার পর পরই কোরিয়া সঙ্গে চুক্তি সই হবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিবি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি বাজেট সহায়তা দেবে বাংলাদেশকে। 'প্রোমোটিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট' (সাবপ্রোগ্রাম ১) শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার ঋণচুক্তি সই হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
এডিবির এই বাজেট সহায়তার সঙ্গে একই প্যাকেজে এআইআইবি'র ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার নিশ্চিয়তা আগেই পাওয়া গিয়েছিল। চলতি মাসে 'ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম' (সাবপ্রোগ্রাম ১) শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার ঋণচুক্তি সই হবে বলে ইআরডির কর্মকর্তারা জানান।
বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ২১ জুন
এদিকে 'সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি (আর অ্যান্ড আর ডিপিসি-২)- এর ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রস্তাব আগামী ২১ জুন বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উঠবে। একই মাসের শেষ সপ্তাতে এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি সই হবে বলে জানা গেছে।