কোক, স্প্রাইট, পেপসির মতো কোমল পানীয়ের দাম বাড়ছে
চিনিযুক্ত খাবার ও কোমল পানীয়ের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোক, স্প্রাইট ও পেপসির মতো কোমল পানীয়র দাম বাড়বে।
আজ (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চিনিযুক্ত খাদ্য ও কোমল পানীয়ের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান হাসান মাহমুদ আলী।
প্রস্তাবে কয়েকটি চিনিযুক্ত পানীয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর বাড়ানো এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।এছাড়া, কোমল পানীয় প্রস্তুতকারকদের বার্ষিক টার্নওভার কর ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া চিনিযুক্ত সব ধরনের খাবারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কেক, বিস্কুট, চকলেট, জ্যাম এবং জেলি, জুস এবং আইসক্রিমের উপর ন্যূনতম করের হার বর্তমানের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে।
এনবিআরের এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেছিলেন, 'চিনি-মিষ্টিযুক্ত খাবার ও পানীয়ের ব্যবহার সীমিত করার জন্য সরকার যদি কর বাড়ায়, তবে এটি একটি ভাল পদক্ষেপ হবে। কারণ এই পণ্যগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।'
তিনি বলেন, 'চিনি ও লবণ মূলত সাদা বিষ। তাই আমাদের যেকোনো উপায়ে এগুলো গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা উচিত।'
বেনজির বলেন, 'চিনিযুক্ত খাদ্যপণ্যগুলোর বেশিরভাগ হজমের অসুখ এবং হাইপারলিপিডেমিয়ার জন্য দায়ী। এটি উচ্চ কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত, যা মানুষের মস্তিষ্ক ও ত্বকের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই পণ্যগুলো সরাসরি মানবদেহে চিনির মাত্রা বাড়ায়।'
তিনি বলেন, 'সরকারের উচিত ফলের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, এগুলো মানবদেহের জন্য উপকারী।'
২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর-এ প্রকাশিত 'বাংলাদেশে কম ওজন, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ: ২০০৪ থেকে ২০১৮'-শীর্ষক এক সমীক্ষা অনুসারে, আমাদের জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গত ১৪ বছরে নারীদের মধ্যে প্রায় তিনগুণ এবং পুরুষদের মধ্যে প্রায় দেড় গুণ স্থূলতা বেড়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডা. রুমানা হক বলেন, 'এনবিআর যদি চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয়ের ওপর কর আরোপ করে, তবে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। এতে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ হবে: রাজস্ব বাড়বে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।'
২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার কার্বনেটেড পানীয় প্রস্তুতকারকদের জন্য ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছিল। তবে বিভিন্ন অংশীজনের সুপারিশে সরকার শেষ পর্যন্ত এর কর কমিয়ে ন্যূনতম ৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
২৩' অর্থবছরে সরকার এই খাত থেকে ১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। ২৪' অর্থবছরে কর বৃদ্ধির পর এসব পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। যার ফলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সমস্ত আমদানি কর, মূল্য সংযোজন কর এবং অন্যান্য করসহ কার্বনেটেড পানীয়ের উপর মোট কর হার ৪৮ শতাংশের বেশি।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) অনুসারে ভারতে পানীয়ের উপর কর ৪০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৯ শতাংশ, নেপালে ৩৯ শতাংশ এবং ভুটানে ৩০ শতাংশ।
যদিও বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির জন্য সমর্থন জানিয়েছেন।
তবে তারা বলেছেন, শুধু ট্যাক্স বাড়ানোই পানীয়ের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট হবে না।