মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত থাকবে, কমানো হবে বাজেট ঘাটতি: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দৃষ্টিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রধান ছয়টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
আজ বৃহষ্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী তার উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় এসব চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় কিছু কৌশল কৌশল উল্লেখ করেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে এবং বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতি রোধে উন্নত দেশে সুদের হার বাড়তে থাকলে– টাকার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের উপর চাপ তৈরি হয়, এবং একইসাথে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি-জনিত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। গত এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৪৭ শতাংশ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪.৮৩ শতাংশ। আইএমএফ বলেছে, ২০২৭ সাল নাগাদ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ৩.৯ শতাংশে নেমে আসবে। তবে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের এর উপরে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ-শৃঙ্খলে ত্রুটি মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। তবে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অবচিতি (মান কমে যাওয়া)। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫.৫ শতাংশ কমেছে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যা করতে চান অর্থমন্ত্রী:
বাজেট বক্তৃতায় আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, "মূল্যস্ফীতি আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়ায় এটি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে চাহিদার রাশ টেনে ধরা এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করার দিকে আমরা বিগত দুটি বাজেটে সর্বাত্মক মনোযোগ নিবদ্ধ করেছিলাম। এ প্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণের পাশাপাশি সহায়ক রাজস্ব নীতি, অর্থাৎ ব্যয় হ্রাস, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণসহ বিভিন্ন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও মূলত আমদানিজনিত মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটিজনিত কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি অনমনীয়ভাবে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে।"
"সেকারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে আমরা ফিসক্যাল কনসোলিডেশন তথা বাজেট ঘাটতি হ্রাস এবং সীমিত কলেবরে হলেও বাজেট বেল্ট টাইটেনিং তথা কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত রাখব। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে (অর্থনৈতিক) প্রবৃদ্ধির গতি স্লথ হয়ে যেতে পারে; সে কারণে আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা। এটি সম্ভবপর হবে যদি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। সে লক্ষ্যে আমরা কর অব্যাহতি ক্রমান্বয়ে তুলে নেয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির দিকে নজর দেবো"- বলেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, "মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতি-কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।"