অস্পৃশ্য, অধরা: বাজেট কি আবারও ধনীবান্ধব?
যেরকম হওয়ার কথা ছিল, আপাতদৃষ্টে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে প্রায় সেরকমই মনে হচ্ছে—সংকোচনমুখী, আনুক্রমিক কর (প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন) ব্যবস্থার কাছাকাছি। আনুক্রমিক কর ব্যবস্থায় ধনীরা অধিকতর কর দেবেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কর দেন।
সরকার এবার করের সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। এটি দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
তবে সরকার প্রকৃতপক্ষে করের সর্বোচ্চ হার সমন্বয় করে মহামারি-পূর্ব স্তরে ফিরে গেছে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে অতি ধনীদের ওপর বাড়তি কোনো বোঝাই চাপেনি।
যেমন, সারচার্জমুক্ত সম্পদের সীমা ৪ কোটি টাকাই রয়ে গেছে, কোনো করহারেই কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি সরকার যখন রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, তখনও এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সারচার্জের বিদ্যমান কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর (এনবিআর) তথ্যানুসারে, ধনীদের ৩ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার সম্পদ, অথবা একাধিক গাড়ি, অথবা নগর অঞ্চলে ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি আবাসন থাকলে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।
১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির জন্য ২০ শতাংশ এবং ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার সম্পদের জন্য ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।
এনবিআরের তথ্যানুসারে, ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের করদাতাদের ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।
সারচার্জের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, অর্থাৎ ধনীদের ওপর কোনো বাড়তি বোঝা আসেনি।
বিলাসবহুল পণ্যের ক্ষেত্রে যানবাহনের কার্বন করেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
গত বাজেটে একাধিক গাড়ির মালিক করদাতাদের ওপর গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা কর আরোপ করা হয়।
এবারের বাজেটে কার্বন করের হারেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
এছাড়া বিলাসবহুল আরেক ক্ষেত্র ভ্রমণ করেও হাত দেওয়া হয়নি। সরকার গত অর্থবছরেও ভ্রমণ কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করেনি।
ভ্রমণ কর ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় আটকে আছে।
ধনীদের আয়ের পাশাপাশি কিছু মূল বিলাসবহুল ক্ষেত্র যদি কর কাঠামোর আওতা থেকে বাদ পড়ে যায়, তাহলে রাজস্ব আসবে কোথা থেকে?
সে কারণেই সম্ভবত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের উপার্জনকারীদের ওপর করের বোঝা বেশি চাপানো হয়।