চাল, সবজি, মাছ , পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি, বিপাকে নিম্ন-আয়ের মানুষ
টানা বৃষ্টিপাত ও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানীতে চাল, শাক-সবজি, মাছ ও পেঁয়াজের মতো জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন-আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বর্ষণ ও বন্যার কারণে সবজি উৎপাদনে ক্ষতির প্রভাব পড়েছে দামে। দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার শুক্রবার টিবিএসকে বলেন, 'সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম। অনেক জায়গায় বন্যায় পুরোপুরি সবজি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেসব গাছে ফসল আসার কথা, টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেগুলোতে আর উৎপাদন ভালো হবে না। সহসাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ এখন দিন দিন সবজির সরবরাহ আরও কমবে। এতে দাম বেড়ে যাবে।'
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, শাহজাদপুর, বাড্ডা ও রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি গোল বেগুন মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা ও লম্বা বেগুন ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কাঁকরোল ৯০-১১০ টাকা, কচুমুখী ১০০-১২০ টাকা, উসতা ও করলা ১২০-১৪০ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা বাজারভেদে ৭০-৮০ টাকা; পটল, পেপে ও ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০ টাকা ও কুমড়া ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় এসব সবজির দাম কেজিতে অন্তত ২০-৪০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজের দাম এখনও আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহের ব্যবধানে দাম আরও ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। দেশে পর্যাপ্ত আলু উৎপাদনের তথ্য দেওয়া হলেও বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।
ব্রয়লার মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। আর ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা ডজন।
এদিকে রাজধানীতে মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে।
বিপাকে নিম্ন-আয়ের মানুষ
তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তেজগাঁওয়ে থাকেন দ্বীন ইসলাম। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছোট চায়ের দোকান। দীর্ঘদিন দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হওয়ায় পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের আয় তো সীমিত। কিন্তু এখন বাজার করলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হয়। পরিবার নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছি। মাছ-মাংস কেনার সাহস করতে পারি না। আলু ভর্তা দিয়ে খেতে হলেও এখন খরচ অনেক।'
রাজধানীর বাড্ডায় বাজার করতে এলে কথা হয় আকরাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা শুধু আশার বাণী শুনি, জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু বাজারের কী অবস্থা, সেটা তো আপনারা দেখছেন। এভাবে মানুষ চলতে পারে? ছোট চাকরি করি। আমার আয় তো বাড়েনি। কাঁচামরিচ ১০০ গ্রামের দাম ৩৫ টাকা চায়।'
দ্বীন ইসলাম আকরাম হোসেনের মতো দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখন খাদ্যমূল্য নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছে। সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 'বাংলাদেশ বাজার তদারকি প্রতিবেদন–এপ্রিল ২০২৪' শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।