বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ৯% বাড়লেও ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই রয়ে গেছে
সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্পের তহবিল ও বাজেট সহায়তার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৯.৮৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮.৯২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে আরও বেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি আদায়ের সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ঋণের সুদহার বেশি হওয়ার কারণে এর বেশি ঋণ না চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ছিল ৯.০৭ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে কয়েক অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল ১০.১৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৭.৯৬ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। ওই সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছিল; তারই অংশ ছিল এ প্রতিশ্রুতি।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেন, বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে শুধু বাজারভিত্তিক ঋণ দেয়, এমন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণে সরকারের আগ্রহ ছিল না। এ কারণে ২০২৩.২৪ অর্থবছরে বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়ে গেছে।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিব) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিব) মতো উন্নয়ন সহায়তা সংস্থাগুলো সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটকে (সোফর) রেফারেন্স রেট হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এসব সংস্থার সব ঋণই বাজারভিত্তিক ঋণ।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সোফর রেট উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে সোফর ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এ হার ১ শতাংশের কম ছিল।
গত দুই অর্থবছরে এআইআইবি থেকে কোনো প্রকল্পের অর্থায়ন হয়নি
গত দুই অর্থবছরে সরকার এআইআইবি থেকে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণ নেয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলে ট্রান্সমিশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ও কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির মতো প্রকল্পগুলোতে ১৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল এআইআইবির। কিন্ত মে মাসে চুক্তির তালিকা থেকে প্রকল্পটিকে বাদ দেওয়া হয়।
এআইআইবির কাছ সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে কোনো প্রকল্প ঋণ না নিয়ে শুধু ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট সহায়তা চুক্তি সই করেছে সরকার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এআইআইবির অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য পাইপলাইনে ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্প ঋণের জন্যই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এখন চুক্তির অপেক্ষা রয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, মূলত সুদ পরিশোধের চাপের কারণে এআইআইবির কাছ থেকে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত ছিল সরকার।
এনডিবির ঋণ নেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক সরকার
২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো এনডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি করার কথা ছিল সরকারের। কিন্ত বাজারভিত্তিক চড়া সুদের ঋণের কারণে ঋণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে খুবই ধীর গতিতে এগোচ্ছে সরকার।
এনডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে এক্সপ্যান্ডেড ঢাকা সিটি ওয়াটার সাপ্লাই রেজিলিয়েন্ট প্রজেক্ট একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
এ প্রকল্পের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিলে ৩২০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্ত পরে আর চুক্তি সই হয়নি। আগাী অর্থবছরে এনডিবির সঙ্গে প্রথম ঋণচুক্তি সই হবে বলে আশা করছে ইআরডি।
গত অর্থবছরে চীনের সঙ্গে কোনো ঋণচুক্তি হয়নি
২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে সরকারের কোনো ঋণচুক্তি সই হয়নি। চীনের সঙ্গে সর্বশেষ ২৭৬.২৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই হয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে 'স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি কোঅপারেশন' শীর্ষক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এতে মোট ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮.০৭৬ বিলিয়ন ডলারের ৯টি প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য ইআরডির ঋণগ্রহণ কর্মসূচিতে নয়টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপান বড় অঙ্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ২.৯৪১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি ইতিমধ্যে ৬৫- মিলিয়ন ডলারের দুটি বাজেট সহায়তা দিয়েছে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে। বাজেট সহায়তা ছাড়াও ১১টি প্রকল্পে জন্য এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ২.৬১৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট সহায়তা রয়েছে।
জাপানের কাছ থেকেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২.৩০৯ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।