পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ, অন্যান্য পণ্যের দামও চড়া
গত মাসে ঢাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৮০-৯০ টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ১১০-১২০ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ পণ্যটির দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও বিপণনকারীদের তথ্যমতে, যখন পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, তখনই দেশেও বাড়ল পণ্যটির দাম।
চাল, আলু ও সবজির মতো অন্যান্য পণ্যের দামও বেশি। তবে শুকনো মসলার দাম কিছুটা কমছে। সাম্প্রতিক বন্যা ও অবিরাম বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার জন্য সবজির দাম বাড়ি বলে দাবি করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার ঢাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকা।
শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১১০ টাকায়, আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা। অদূর ভবিষ্যতে এই দাম বাড়তি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমদানি বাড়ালে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হতে পারে। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খরচ বেশি হওয়ায় ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একই প্রবণতা দেখা গেছে নিত্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরায় ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; ঈদের আগে দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন থেকে প্রায় ১৭.৬৫ লাখ টন পেঁয়াজের জন্য আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬.২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ টিবিএসকে বলেন, পেঁয়াজের বর্তমান দাম ৭০-৭২ টাকা কেজি। অতিরিক্ত আমদানি ব্যয় ও ক্ষতির ঝুঁকির কারণে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইছেন না।
সবজি, চালের দাম বাড়তি
পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য পণ্যেও দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বেগুন, কাঁকরোল, করলার দাম সবচেয়ে বেশি। ঢ্যাঁড়শ, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা,ঝিঙা, পটোল, কুমড়া ও পেঁপের দাম ৮০ টাকার নিচে আছে।
গাজর, শসা, টমেটোর দামও বেড়েছে। কাঁচা মরিচ পাইকারিতে আরও বেড়ে প্রতি কেজি ২৬০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩২০ টাকায়।
ঢাকার শাহজাদপুরের সবজি বিক্রেতা মো. ইউসুফ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন।
আলুর দাম পাইকারিতে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ৬৫ টাকাই রয়েছে।
অন্যদিকে গত মাসে বেশিরভাগ জাতের চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম ঈদের আগের দামের চেয়ে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাওন বলেন, মিল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে চালের দাম।
মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে
ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে ১৭০-১৮০ টাকায় পৌঁছেছে। এখন প্রতি কেজি সোনালী মুরগির দাম ৩২০-৩৪০ টাকা, বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা এবং সাদা ডিম প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকা।
মূল্যবৃদ্ধির আঁচ লেগেছে ভোক্তাদের গায়ে। গুলশানের বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, 'খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেশি। এখন সপ্তাহে মুদিদোকানের বাজেট ২-৩ হাজার টাকা রাখলেও যেন যথেষ্ট হয় না।'
সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল আগামী ২-৩ মাসে খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ফসল উৎপাদন কম হওয়ায় সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধি হয়। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও বন্যা মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
মসলার দামে মিশ্র চিত্র
কিছু মসলার দাম কমলেও রসুন ও আদার দাম কমেনি।
বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ টিবিএসকে বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে মসলা-জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল। এলাচের ডিও বিক্রির কারণে অনেক টাকা উধাও হয়ে গেছে। ওভার ট্রেডের কারণে অনেক টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে মসলা-জাতীয় পণ্যের দাম খুব বেশি কমার সম্ভবনা নেই।'
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঈদের আগে অস্বাভাবিকভাবে আদার দাম বাড়ার পর তা আর কমেনি।
ঈদের আগে প্রতি কেজি আদার খুচরা দাম ২৫০-২৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। বর্তমানে বাজারে পণ্যটি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি মূল্য এখনও ২৫০ টাকা।
গত কয়েক মাসে নাটকীয়ভাবে দাম বেড়ে যাওয়া এলাচ প্রতি কেজি বর্তমানে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩,২০০-৩,৬০০ টাকায়। বর্তমানে পণ্যটির পাইকারি মূল্য ২,৯০০-৩,৩০০ টাকা কেজি।
জিরা খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। বর্তমান পাইকারি মূল্য ৬৬০ টাকা।
প্রতি কেজি লবঙ্গ এখন খুচরায় ১,৬০০ টাকা ও পাইকারিতে ১,৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে প্রতি কেজি দারুচিনি খুচরায় ৫৬০-৬০০ টাকায় এবং পাইকারিতে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হওয়া তেজপাতার দাম গত কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। পণ্যটি প্রতি কেজি খুচরায় ১৫০-২০০ টাকা এবং পাইকারিতে ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।