২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব বেড়েছে ১৫%, তবু সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ২৭,০০০ কোটি টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশের ওপরে।
এই রাজস্ব আহরণকে সন্তোষজনক বলছেন কর্মকর্তারা। তা সত্ত্বেও এ সময়ে রাজস্ব সংগ্রহে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। আর বছরের শুরুতে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে নিলে এই ঘাটতির পরিমাণ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত বছর বিভিন্ন কারণে আমদানি কম হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতিতেও কিছুটা গতিমন্থরতা ছিলো। তা সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক।'
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'ট্যাক্স লিকেজ কমানোর ক্ষেত্রে এনবিআরের নেওয়া প্রচেষ্টা ভালো ফল দিয়েছে।'
এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে করহয়ার বাড়ানোর কারণেও রাজস্ব আদায়ে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অবশ্য এই প্রবৃদ্ধির জন্য মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান টিবিএসকে বলেন, 'দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে, যার কারণে রাজস্ব আদায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া নতুন আয়কর আইনও রাজস্ব আদায় কিছুটা বাড়াতে সহায়তা করেছে।'
তবে তা সত্ত্বেও প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআরের আদায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এমন ঘাটতি যে হবে, তা সিপিডির পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল।'
এই ঘাটতি নতুন অর্থবছরে সরকারের নেওয়া লক্ষ্যমাত্রার হিসাব বদলে দেবে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের হিসাব ছিল, গত অর্থবছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে।
সেই হিসাবে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৭ শতাংশ। কিন্তু ২৭ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হওয়ায় এই লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে ২৬ শতাংশে।
তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, এই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে না। 'এভাবে প্রতি বছর বড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া এবং তা অর্জন করতে না পারায় রাজস্বনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি দেখা দেয়,' বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে যে গতিপ্রকৃতি দেখা যাচ্ছে, তাতে রাজস্ব আদায় কম হলে ব্যয়ও সমন্বয় করতে হবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে। এই সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি, যার পরিমাণ ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
গত অর্থবছরে আয়কর আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি কর আদায় ৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৮১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আলোচ্য সময়ে আমদানি কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমার কারণ মুলত আমদানি কমে যাওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।