রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেড়ে ১১৯.৪০ টাকা
ডলারের প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু ব্যাংককে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পর রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেড়ে ১১৯.৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিরতা, পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং তিন দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে গত সপ্তাহে রেমিট্যান্স আসা কমেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে রোববার বেশ কয়েকটি ব্যাংককে বেশি দাম দিয়ে হলেও রেমিট্যান্সের ডলার কেনার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সোমবার একদিনের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ৬০-৭০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে গেছে বলে জানান তারা।
এর আগে রোববারও আগের দিনের তুলনায় রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ১০-২০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছিল। এদিন ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১৮.৮০ টাকা রেটে রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানিয়েছেন, সোমবার জনপ্রিয় এক্সচেঞ্জ হাউজ মানিগ্রাম ডলারপ্রতি ১২০.৬৯ টাকা দাম দিয়েছে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন রেমিট্যান্সের ডলারের রেট দিয়েছে ১১৯.৩৫ টাকা। রোববার প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৯ টাকার রেট দিচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকতে পারে। এর আগে ডলারের দর ৭ টাকা বাড়ানোর পর গত মে মাসে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং জুন মাসে ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউজ সোমবার সকাল থেকে রেমিট্যান্সের ডলারের রেট বেশি চাইতে শুরু করে।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে ১১৯.৫০ টাকা রেটে ডলার বিক্রির জন্য অফার করা হয়। তবে এত বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা কঠিন। তাই আমরা আজ খুব বেশি রেমিট্যান্সের ডলার কিনিনি।'
অবশ্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো দাবি করেছে, তারা রেমিট্যান্সের ডলারের রেট খুব বেশি বাড়ায়নি।
একটি শীর্ষস্থানীয় এক্সচেঞ্জ হাউজের কান্ট্রি ম্যানেজার জানান, ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে ১১.২০ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের আমদানি পেমেন্টগুলো করতে পারেনি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর পেমেন্টের চাপ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। উল্টোদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত সপ্তাহে কম আসায় এখন ডলারের রেট কিছুটা বেড়েছে।'
বৈধ চ্যানেলে ডলারের দাম অবৈধ চ্যানেলের কাছাকাছি চলে এসেছে মন্তব্য করে এ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠালে ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে ১২১.১০ থেকে ১২১.৫০ টাকার মতো। অর্থাৎ বৈধ চ্যানেলের সঙ্গে এর পার্থক্য এখন ২ টাকার মতো।
'তার ওপর বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে সরকারের পক্ষ থেকে ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়। ফলে বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে গ্রাহক আগের মতো কম রেট পাচ্ছেন না,' বলেন তিনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে টিবিএসক বলেন, 'রেমিট্যান্সের প্রবাহে আমরা এখনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আসিনি। আমার ধারণা, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে আমাদের আরও কয়েকদিন লাগবে।'
খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে ১২৩ টাকা
রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলাবাজারেও ডলারের দর গতকাল সোমবার ১ টাকা বেড়ে ১২৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বেশ কয়েকটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা বেড়েছে।
অবশ্য ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত নগদ ডলার রয়েছে উল্লেখ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এখন নগদ ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১১৮.৫০ টাকা রেটে। তবে খোলাবাজারের মতো সব ধরনের গ্রাহকদের কাছে আমরা ডলার বিক্রি করি না। আমাদের কাছে থেকে ডলার কিনতে হলে গ্রাহককে অবশ্যই তার পাসপোর্ট সঙ্গে আনতে হবে।'