ডলারের প্রবাহ বাড়বে ১১-১২ বিলিয়ন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা থাকবে: গভর্নর মনসুর
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/11/11/ahsan_mansur.jpg)
চলতি অর্থবছরে দেশে আসা মার্কিন ডলারের প্রবাহ আরও ১০-১২ বিলিয়ন বাড়তে পারে, যার সুবাদে মার্কিন ডলা্রের বিনিময় হা্রে এসময় স্থিতিশীলতা থাকবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, "এপর্যন্ত রেমিট্যান্সে আমাদের প্রায় ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। সামনে ঈদ ও হজ উপলক্ষে রেমিট্যান্স ইনফ্লো (দেশে আসা) বাড়বে। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি পাই, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির কারণে আরও ৫-৬ বিলিয়ন ডলার বেশি আসার কথা। অর্থাৎ, অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরে আমাদের ডলার ইনফ্লো ১১-১২ বিলিয়ন বাড়ার কথা। ফলে আমাদের বিনিময় হারের ওপর প্রেশার কমে স্ট্যাবিলিটি কন্টিনিউ করবে।"
আজ সোমবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের চলতি ও আর্থিক হিসাবে এখন উদ্বৃত্ত আছে, "ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে আমরা সার্বিকভাবে আগের তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি। ডলার রেটে স্ট্যাবিলিটি থাকার অন্যতম কারণ ইমপোর্ট প্রেশারটা আমরা সামলে ফেলেছি। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পর আমদানির সিজনাল ডিমান্ড কমে যাবে। ফলে সবমিলিয়ে এক্সচেঞ্জ রেটে (বিনিময় হারে) বড় ধরনের চাপ পড়বে না বলেই মনে করছি।"
মূল্যস্ফীতি কমাতে বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে হবে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, 'এই স্থিতিশীলতা মানে কিন্তু বিনিময় হারকে বেঁধে দেওয়া না। ডলারের রেট এখন ১২২ টাকা আছে, এটা ১২৪ টাকাও হতে হবে। তবে এটাকে আনস্ট্যাবল (অস্থিতিশীল) বলা যাবে না। ডলারের দরে স্থিতিশীলতা আসায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি এখন ম্যানেজেবল।"
এসময় মুদ্রাবাজারের কিছু এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজের বিনিময় দরে কারসাজি করার বিষয়েও তাঁর উদ্বেগ ব্যক্ত করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, "এক্সচেঞ্জ রেটে আমরা একটা করিডর করে দিয়েছি। ব্যাংকগুলো এই করিডোরের মধ্যে থেকে ডলার কেনাবেচা করছে। বাংলাদেশের এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে কয়েকটি এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজ ম্যানিপুলেশন করছে। মিডিয়ায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, আমরাও এর প্রমাণ পেয়েছি। তারা যে দাম চাইবে— সেটা বাজারদর না। আমরা যে দাম বলবো, সেটাই বাজারদর। এক্সচেঞ্জ রেটের পলিসি তারা নির্ধারণ করে না, আমরা করি।"
এ পর্যায়ে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে—- সেটি অনেক বেশি বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ডলারের রেটে এখন যে ব্যান্ড দেওয়া আছে, সেটি ছেড়ে দিলে রেটটা কোথায় যাবে আমি জানি না। নিশ্চিতভাবেই সেটা শ্যুট আপ করবে। আমরা চাই না ডলারের রেট এখনই ১৩৫-১৪০ টাকায় চলে যাক। যদি রেট অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যদি ন্যায্য দামে রেমিট্যান্সের ডলার না দেয়, আমরা কিনবো না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হিসেবে, আমি তাদের অতিরিক্ত দাম নেওয়া সমর্থন করব না। তবে, এক্সচেঞ্জ রেটকে আল্টিমেটলি আমাদের ফ্রি-ফ্লোট করে দেওয়া প্রয়োজন। তবে এর জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন।"
গভর্নর আরো বলেন, "একটি দেশের একজন প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে তাদের দেশের একটি এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে আমরা কেন ডলার কিনছি না, তা জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলে দিয়েছি, ন্যায্য দামে ডলার দিতে না পারলে— আমাদের দেশে ব্যবসা করার প্রয়োজন নাই।"
বকেয়া আমদানি দায় পরিশোধের চাপ এবং এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর দৌরাত্ম্যে গতবছরের ডিসেম্বরে ডলারের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ ১২৮ টাকায় চলে গিয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে সেটি কমে আসে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দরে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে।
বিনিময় হারের বিষয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে দরের স্থিতিশীলতা ও নমনীয়তা উভয়ই শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। এটি বিনিময় হারে স্থিতিশীলতার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে আরও নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ করে দেবে।