জোর করে কাউকে বের করা হবে না, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা: সালেহউদ্দিন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অতীতে কেউ কোনো অপরাধ করে থাকলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেছেন, এখন স্বাভাবিকভাবে সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে। 'জোর করে একে বের করো, ওকে বের করো—এসব হবে না।'
উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শনিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য সমস্ত ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বন্দর—সব সচল থাকবে। কে আছে, কে নেই—এসব বিবেচ্য নয়। যে-ই চার্জেই থাক, তারা কাজ করবেন। শিডিউল, নিয়মনীতি অনুসারে সব চলবে। ডিসক্রিশনারি, বিশেষ ক্ষমতা এসব প্রয়োগ করা হবে না।'
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, 'অতীতে কেউ কিছু করে থাকলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম হবে। জোর করে একে বের করো, ওকে বের করো—এসব হবে না।'
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নতুন সরকারের গুরুত্ব ও প্রধান কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা।
'আইনশৃঙ্খলা বলতে শুধু রাস্তাঘাটের নয়, ব্যাংকগুলো চালু করা, বন্দরগুলো চালু করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি অবিলম্বে শৃঙ্খলা আনতে। আর চ্যালেঞ্জ যেগুলো আছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সামষ্টিক ক্ষেত্রে, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে, আমরা অবিলম্বে সমাধানের চেষ্টা করব,' বলেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে গেলে ব্যবসায়ও তার প্রভাব পড়বে। আর এটি থমকে গেলে চালু হতে অনেক সময় লাগে। তাই তারা চাচ্ছেন অর্থনীতির গতি আরও সচল করতে।
অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনতে কত সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বেসিক কাজগুলো করতে বেশি সময় লাগবে না। আমি মনে করি না অর্থনীতি লাইনচ্যুত হয়েছে। মন্থর হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থনীতি সঠিকপথে ছিল; মাঝখানে বিচ্যুত হয়েছে। আমরা গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেব।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে মানুষের অফুরন্ত কর্মস্পৃহা আছে। 'সুতরাং, আমার মনে হয়, নেতৃত্ব আর ব্যবস্থাপনা থাকলে সমস্যা হবে না। দ্রুত সবকিছু সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে।'
গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, 'ভুল-ত্রুটি হলে অবশ্যই সমালোচনা করবেন। কিন্তু অযথা সমালোচনা করা ঠিক হবে না।'
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ম্যাক্রোইকোনোমি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও এতদিন উন্নয়ন কৌশলে ভুল ছিল। প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সুফল সব মানুষ পায়নি। ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থপাচার ও অলিগার্ক
অর্থপাচার প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সেটা আমরা জানি। ওইটা একটা প্রসেস আছে। তথ্য লাগবে। যাদের সাথে যোগাযোগ করে করতে হয়, সেটা আমরা করব।'
দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। 'তবে এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান গুরুত্ব আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটি করতে না পারলে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।'
আওয়ামী লীগ যেসব অলিগার্ক সৃষ্টি করেছিল, তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। 'আগে আমাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হচ্ছে। শর্টটার্ম কী কী করবো। শুক্রবার মিটিংয়ে ইমিডিয়েটলি ল অ্যান্ড অর্ডার ঠিক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিফেন্সের লোকজনের সাথে মিটিং হয়েছে। তাদের সকলকে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করেন। বন্দরগুলো ঠিক করেন।'
ব্যাংকিং খাত
ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের চেয়ে আগে দরকার ব্যাংকের ওপরে আস্থা সৃষ্টি করা। চালু করা। তারপরে সংস্কার। 'ইমিডিয়েটলি সংস্কার করতে গেলে আসল কাজ করা সহজ হবে না।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন নিয়ম-নীতি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু সেগুলো মানা হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায়ই নিজেদের জারি করা সার্কুলার দিনে দিনে পাল্টে ফেলে। 'সকালে একটা সার্কুলার করে, বিকালে সেটা পাল্টায়। এটা একসময় হতো না। আমরা চিন্তাভাবনা করে করতাম। আমি সেই জায়গায় শক্ত হতে চাই।'
পদত্যাগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জানতে সালেহউদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত করেন, গভর্নর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। তবে তার পদতাগের বিষয়ে একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার আছে। রোববার একটি সভায় সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ডেপুটি গভর্নর চাপের মুখে সাদা কাগজে পদত্যাগ করেছেন। অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) অফিস করছেন না। অনেক ব্যাংকে কর্মীরা আসছেন না। এসব বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'অনেকে শুনেছি পদত্যাগ করেছেন। এখন তারা নিজেদের বিবেচনামতো, নিজেদের নিরাপত্তা বজায় রেখে অফিসে আসবেন কি আসবে না, এটা তাদের বিষয়। কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসবেন, সেটা তো বলা যায় না। কেউ যদি জীবনের নিরাপত্তাহীনতা মনে করেন, সেক্ষেত্রে কেউ তার দায়িত্ব নিতে পারবে না।'
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন কি না জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। 'এনবিআর চেয়ারম্যানকে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। উনি সেটা করছেন।'