আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ২২টি ছাড়া সব পোশাক কারখানা খোলা
টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সৃষ্ট অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি।
শিল্প পুলিশ জানায়, ২২ টি কারখানা ছাড়া আজ চালু রয়েছে শিল্পাঞ্চলের বাকি সব কারখানা এবং শ্রমিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন।
তবে মেডলার, সেতারা, ব্যান্ডো অ্যাপারেলসসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে, যদিও সমস্যা সমাধানে সেখানে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, "এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। হামীম, শারমীনসহ অন্যান্য সকল কারখানায় কার্যক্রম চলমান আছে, শ্রমিকরা কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, "এর বাহিরে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ১৬টি এবং ৬টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।"
এছাড়াও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন কারখানার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকার পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, যে-সকল কারখানাগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে, সেগুলো খুলে দিতে মালিকপক্ষ এবং বিজিএমইএ'র সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে শিল্প পুলিশ। শ্রমিকরা সবাই কাজ করতে আগ্রহী। কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হলে টুকটাক যেখানে যা সমস্যা রয়েছে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলোরও সমাধান সম্ভব হবে।
শ্রমিক নেতারাও একই কথা বলেছেন। তারা বলেন, যেহেতু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কাজেই এখন বিক্ষিপ্তভাবে কোন কারখানা বন্ধ রেখে সমস্যার সমাধান হবে না বরং এর প্রভাব পড়বে অন্যান্য কারখানাগুলোতে।, যেখানে পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। কাজেই যেখানে যা সমস্যা আছে, কারখানা খুলে দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে জোর দেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, তাছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলেও অধিকাংশ কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। কাজেই যে-সব কারখানা বন্ধ আছে, আমি তাদের মালিকপক্ষের প্রতি অনুরোধ করবো আপনারা দ্রুত কারখানা খুলে দিন, শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করুন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করুন। কারখানা বন্ধ রাখা কোনো সমাধান না।
"এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে যেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিবেশেও যদি মালিকরা শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খুঁজতে না পারেন তবে সেটি হবে মালিকদের ব্যর্থতা", যোগ করেন তিনি।
এদিকে বিজিএমইএ সুত্র বলছে, আশুলিয়ায় আজ ২০ টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ১২টি এবং স্ববেতনে ছুটি আছে বা কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার সংখ্যা ৮টি।
এর মধ্যে রেডিয়্যান্স ফ্যাশন, রেডিয়্যান্স জিন্স, কমফিট কম্পোজিট লিমিটেড, টেক ম্যাক্স, শিন শিন অ্যাপারেলস, পার্ল গার্মেন্টস জেনারেশন নেক্সটসহ আরও কয়েকটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ আছে। আর স্ববেতনে কারখানা ছুটি রয়েছে, কাজ বন্ধ আছে বা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেড, নিউএইজ গ্রুপ, সেতারা গ্রুপ, ব্যান্ডো ডিজাইন।
উল্লেখ্য, আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর আওতাধীন এলাকায় ১৮৬৩টি কলকারখানা রয়েছে, যার সিংহভাগই পোশাক কারখানা।