হাসিনা সরকারের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি: ব্যবসা শুরু করা এখনো এক দুঃস্বপ্ন
হাইলাইটস
- ব্যবসা শুরু করতে বা পরিচালনায় যেতে ১৯০ ধরনের নথি সংগ্রহের প্রয়োজন পড়ে
- লাইসেন্সের এই বাহুল্য কমাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা
- চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো অন্যান্য দেশে কাগজপত্রের কাজ অনেক সহজে সম্পন্ন হচ্ছে
- এসব জটিলতার কারণে, অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীও তাদের উদ্যোগ থেকে সরে যাচ্ছেন
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময়ে ব্যবসার প্রক্রিয়া সহজ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পাহাড়প্রমাণ কাগজপত্রের ঝামেলা ও আমলাতান্ত্রিক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
এমনকি কিছু ব্যবসা শুরু করার অনুমতি পেতেই ১৯০টি পর্যন্ত নথি জোগাড় করতে হয়।
যদিও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-র চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসার সূচক – ইজ অব ডুয়িং বিজনেস এ বাংলাদেশের অবস্থানের আরও উন্নতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বারবার।
এই সূচকে বাংলাদেশ কিছুটা উন্নতিও করে, যেমন ২০১৯ সালে ১৬৮তম অবস্থানে উঠে আসে আগের বছরের ১৭৬তম অবস্থান থেকে, কিন্তু এরপরেও সার্বিক পরিস্থিতি হতাশাজনকই রয়ে গেছে।
১৯০ ধরনের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার জন্য, যদি আমাকে ১৯০ জায়গায় যেতে হয় – তার কারণে হয় দেরী হচ্ছে, নয়তো দুর্নীতি (ঘুষ দিতে) হচ্ছে, নাহলে দুটোই একসাথে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় – অর্থায়ন, পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রক নয়, বরং বিভিন্ন লাইসেন্স পেতে যে বিপুল পরিমাণ কাগজপত্রের কাজ করতে হয় – তাতে যেন গোলকধাঁধায় খেই হারিয়ে ফেলার অবস্থা হয়। আরেকটি বড় সমস্যা দুর্নীতি, কারণ একটি নথি, লাইসেন্স পেতে অথবা লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে প্রতি পদে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ বা ঘুষ।
এই প্রেক্ষাপটে তারা যে প্রশ্ন রেখেছেন তা খুবই সহজ – ব্যবসার প্রক্রিয়া সরলীকরণে বাংলাদেশের আর কতদিন লাগবে?
২৩টি লাইসেন্স পেতে ১৯০ নথি
বাংলাদেশে একটি পাদুকা বা ফুটওয়্যার কারখানার জন্য ২৩টি ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স বা সনদের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে কিছু কিছু আবার প্রতিবছর বা ছয় মাস পর পর করতে হয় নবায়ন।
এসব লাইসেন্স পেতে সর্বোচ্চ ১৯০টি নথি দিতে হয় ব্যবসাগুলোকে, এরমধ্যে ৩০টি হলো সাধারণ নথি আর নতুন জমা দিতে হয় ১৬০টি নথি।
বাংলাদেশের অন্যান্য খাতের ব্যবসার জন্যও কাগজপত্রের এই প্রক্রিয়া প্রায় একই – চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো এশীয় দেশের চেয়ে যা সম্পূর্ণ বিপরীত।
টাকা দিলেই সহজে হয় কাজ
কাগজপত্রের এসব বাড়াবাড়ি আসলে নিতান্তই আনুষ্ঠিকতা। যেখানে মূল চ্যানেঞ্জ শিল্পের নিরাপত্তা বা পরিবেশগত বিধিমালাও নয় – বরং অনুমোদন হবে কিনা নির্ভর করে টাকার ওপর।
যত উপরি বা ঘুষ দেওয়া হবে, ততোই সহজে হবে প্রক্রিয়াটি – দুঃসহ এই বাস্তবতাই সবাই মেনে নিয়েছেন।
এই ধরনের বাধাবিপত্তির পরেও, বিকশিত হয়েছে দেশের বেসরকারি খাত। ব্যবসায়ীরা বড় ঝুঁকি নিয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন হাজারো কর্মসংস্থান, এবং সরকারের জন্য শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সংস্থান করে দিয়েছেন, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ৫২ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে প্রসায় ৪ লাখ কোটি টাকায়। তাদের এই অধ্যাবসায় প্রশংসাযোগ্য।
হতাশ বিদেশি বিনিয়োগকারী
দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা ও বড় বিনিয়োগ করার পরেও – দরকারি লাইসেন্স পেতে বিলম্বের কারণে, এখনও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে না – একটি বহুজাতিক ভোগ্যপণ্য কোম্পানি। এবিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা জানা না থাকায় – আগামী ছয় মাসের মধ্যেও ব্যবসা শুরু করা যাবে কিনা– সেটিও অনিশ্চিত।
গত ১৬ অক্টোবর কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বিলম্বের ৯৯ শতাংশের জন্য দায়ী আমলাতন্ত্র। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেতে এবং গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটির সংযোগ পেতে অত্যধিক সময় লেগেছে।
ব্যাপক পরিমাণ নথিপত্র ও লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাঁর ক্ষোভ ও হতাশা তুলে ধরে ওই বিনিয়োগকারী বলেন, 'ওহ মাই গড… এত বেশি পেপারওয়ার্ক করতে হয় তোমাদের এখানে। বাংলাদেশে আমাদের ৭০ এর বেশি নথি জোগাড় করতে হবে, অন্যান্য দেশের চেয়ে যা প্রায় তিনগুণ বেশি।'
'বাংলাদেশে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করতে অন্তত এক বছর লাগে, অন্য দেশে লাগে মাত্র তিন মাস। ট্রেডিং কোম্পানির ক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা যায়'- বলছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ভিয়েতনামের একজন চামড়া প্রস্তুতকারক শিল্পের উদ্যোক্তা, কিন্তু যখনই বিপুল পরিমাণ লাইসেন্স গ্রহণ ও তা নিয়ে ঝঞ্ঝাটের কথা শুনলেন, তখন প্রকল্প বাদ দিয়ে চলে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা জানিয়ে ভিয়েতনামের ওই ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন জেনিস স্যুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান। বিদেশি ওই উদ্যোক্তার প্রতিক্রিয়ার উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'যে ব্যাপক সংখ্যক ডকুমেন্ট জোগাড় করতে হয়– তাতে করে এখানে ব্যবসা করা খুবই কঠিন।'
"ভিয়েতনামের ওই ব্যবসায়ী আমাকে বলেন, 'হয়তো তোমাদের সরকার এখানে বিদেশি বিনিয়োগ হোক— সেটাই চায় না," যোগ করেন নাসির খান।
এ দুটি ঘটনা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কী রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় তা উঠে আসলেও, একইরকম বাধার মুখে পড়তে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও। এতে সময়ক্ষেপণ হয় এবং ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যায়, শেষপর্যন্ত যার ফলে ক্ষয় হয় আস্থার – এমনটাই বলেন স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএ) জানিয়েছে, ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজ করতে যতগুলো লাইসেন্স বা সনদের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর সংখ্যা কমানো সম্ভব।
কাগজপত্রের কাজ সহজে হয় অন্যান্য দেশে
এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন চামড়াখাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এসময় তারা অন্যান্য দেশের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশও তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ী সমিতিটি জানায়, বাংলাদেশে একটি ব্যবসা শুরুর জন্য সনদ ও লাইসেন্স নিতে ১৯০ ধরনের নথির প্রয়োজন হয়। চীনে দরকার হয় মাত্র ১৭টি, ভিয়েতনামে ২১টি এবং কম্বোডিয়ায় প্রায় ২৩টি।
বাংলাদেশে যেখানে প্রয়োজন হয় ২৩টির – সে তুলনায়, ভিয়েতনামে একই ধরনের ব্যবসার জন্য মাত্র পাঁচটি সনদের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগ নিবন্ধন সনদের জন্য একজন বিনিয়োগকারীর ১০টি নথি লাগে, উদ্যোগ নিবন্ধন সনদের জন্য লাগে সাতটি নথি, কর নিবন্ধনের ও ব্যাংক নিবন্ধনের জন্য দরকার হয় দুটি নথির, মূলধন অবদানের জন্য একটি, পারমিট বা সাব-লাইসেন্স এর জন্য একটি — এভাবে মাত্র ২১টি নথি থাকলেই একটি ব্যবসা শুরু করা যায়।
লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা ২৩টি থেকে কমিয়ে ১০টি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন এলএফএমইএ'র সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এটা করা হলে দরকারি নথির সংখ্যা কমে ৯০টিতে নেমে আসবে বলেও জানান তিনি।
টিবিএসকে তিনি বলেন, '১৯০ ধরনের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার জন্য, যদি আমাকে ১৯০ জায়গায় যেতে হয় – তার কারণে হয় দেরী হচ্ছে, নয়তো দুর্নীতি (ঘুষ দিতে) হচ্ছে, নাহলে দুটোই একসাথে হচ্ছে। বাংলাদেশে একটি প্রস্তুতকারক ব্যবসা শুরু করতে প্রায় দুই বছর লেগে যায়, তাছাড়া কেনইবা প্রতিবছরে সব কয়টি লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে?'
নাসিম যিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির-ও সাবেক সভাপতি আরও বলেন, '২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের কথা রয়েছে বাংলাদেশের, যার ফলে আমরা বেশকিছু সুবিধা হারাব এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আমাদের ব্যবসার খরচ কমানো (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) এবং সহজে ব্যবসা করা (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) নিশ্চিত করতে হবে।'
ফুটওয়্যার ও চামড়া শিল্পের মতোই আরএমজি বা তৈরি পোশাকখাতে ২২ ধরনের লাইসেন্স প্রয়োজন হয় বলে জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পোশাক রপ্তানিকারক মোহাম্মদ হাতেম।
টিবিএসকে তিনি বলেন, 'এসব লাইসেন্সের জন্য আমাদের সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, যেখানে ঘুষসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।'
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিই বা ফিকি)-র সভাপতি জাভেদ আখতারও এসব জটিলতা ও বহু জায়গা থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, 'আমি গুনে দেখেছি, বাংলাদেশে কারো বিনিয়োগের ক্লিয়ারেন্সের জন্য ২৯টি কর্তৃপক্ষ থেকে ১৪১টি অনুমোদন নিতে হয়।'
এত সংখ্যক নথিপত্র ও সনদ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে 'সমস্যাজনক' বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ইতঃপূর্বে সরকারের মনোনীত এম মাসরুর রিয়াজ।
তিনি বলেন, 'যত লাইসেন্স আর কাগজপত্রের দরকার হয়, ততোই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খরচ বেড়ে যায়। এইক্ষেত্রে, স্থানীয় ও বিদেশি– উভয় ধরনের বিনিয়োগই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
যেসব লাইসেন্স ও সনদ বাদ দেওয়া যায়
বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতককারকরা মনে করেন, যে ২৩ ধরনের লাইসেন্স ও সনদ তাঁদের নিতে হচ্ছে, এরমধ্যে ১৩টিরই দরকার নেই, যারমধ্যে রয়েছে বহুল বিতর্কিত ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স-ও, এই শিল্পের ব্যবসায়ী সমিতিও যেটির বিষয়ে কথা বলে আসছে।
এই ১৩টি লাইসেন্স ও সনদগুলো হচ্ছে — যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)-র ক্লিয়ারেন্স, পার্টনারশিপ ডিড, বহুতল ভবনের জন্য অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনা, একই কর্তৃপক্ষের থেকে পৃথক লাইসেন্স নেওয়া থাকলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের উভয় লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স, বিদেশি নাগরিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এনরোলমেন্ট সনদ, এবং পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইটের জন্য নিবন্ধনসমূহ।
সরকার ব্যবসায়ীদের এসব দাবি মেনে নিলে, ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন নথি জমা দেওয়ার আর প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছে এলএফএমইএ।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, '২৩ ধরনের লাইসেন্স নেওয়া অনাবশ্যক, কারণ এতে সময় ও ব্যয় দুটোই বেড়ে যায়।'
অনাবশ্যক কাগজপত্রের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যা বলছে
এদিকে ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ করতে তারা কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস বন্ড, রপ্তানি ও আইটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বন্ড লাইসেন্স পেতে বর্তমানে যেসব কাগজপত্র সংগ্রহের দরকার হয়, আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। যদি কোনো নথি অনাবশ্যক মনে হয়, আমরা নিশ্চয় সেটা বাদ দেওয়ার কথা ভাবব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এনবিআর সংস্কারের কাজ করছি, এবং যৌক্তিকভাবে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েছি, যাতে সৎ ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হন এবং অসৎরা নিরুৎসাহিত হন।'
তবে নাম না প্রকাশের শর্তে কাস্টমসের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, সমস্যা কেবল কাস্টমস কর্মকর্তাদের দিক থেকে হয় না, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও আছে।'
পাঁচ বছর পরেও নিষ্ক্রিয় বিডার ওয়ান-স্টপ সার্ভিস
একটি সিঙ্গেল উইন্ডোর আওতায়, উদ্যোক্তাদের ১৫০ ধরনের সেবা দিতে ২০১৯ সালে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। যেটি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে বিনিয়োগকারীদের একমাত্র যোগাযোগের জায়গা হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ছিল।
কিন্তু, এটি চালুর পাঁচ বছর পরে এসেও প্রত্যাশিত মাত্রার সেবা দিতে পারছে না, যার পেছনে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার থেকে সহযোগিতার অভাবকে দায়ী করেন এর কর্মকর্তারা।
বিডার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, বিডার সিস্টেম রেডিই আছে, কিন্তু এর আওতায়– এনবিআর, আরজেএসসি, সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মতো অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা প্রদানের জন্য এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।'
বিডার ডিরেক্টর জেনারেল মো. আরিফুল হক দাবি করেন, ২০১৯ সালে চালু ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালুর পর থেকে বিডা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার (বিডা-সংক্রান্ত) সেবা প্রদান করেছে, যারমধ্যে ৯৮ শতাংশই সময়মতো দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সংস্থার প্রস্তুতির অভাবে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পুরোপুরি কাজ করতে পারছে না বলেও স্বীকার করেন তিনি।