জাহাজ রপ্তানি চুক্তির খবরে ওয়েস্টার্ন মেরিনের শেয়ারদর বেড়েছে ৯.৩৮%
সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক (ইউএই) একটি কোম্পানির কাছে অন্তত আটটি জাহাজ রপ্তানির পরিকল্পনা ঘোষণার পর দেশের অন্যতম প্রধান জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড-এর শেয়ারদর ৯.৩৮ শতাংশ বেড়ে ৭ টাকায় পৌঁছেছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি এই চুক্তির ঘোষণা দেয়।
চার বছরের রপ্তানি স্থবিরতা কাটিয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিনের এই ঘোষণাকে বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৬.৫০ টাকা, যা পরে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে বৃহস্পতিবার ৬.৪০ টাকায় নেমে আসে।
দুর্বল পারফরম্যান্স, ঋণখেলাপি এবং লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারণে ওয়েস্টার্ন মেরিনের শেয়ারহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন।
ওয়েস্টার্ন মেরিনের তথ্যমতে, দুই বছর পর দেশের প্রথম জাহাজ রপ্তানি করছে তারা। দেশ থেকে সর্বশেষ জাহাজ রপ্তানি হয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে।
২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক মারওয়ান শিপিংয়ের সঙ্গে আটটি জাহাজ নির্মাণের জন্য চুক্তি সই করে ওয়েস্টার্ন মেরিন। চুক্তি অনুযায়ী, ৬৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ল্যান্ডিং ক্রাফট 'রায়ান' ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হস্তান্তর করা হবে। 'খালিদ' ও 'ঘায়া' নামের দুটি টাগবোট সরবরাহ করা হবে ২০২৫ সালের এপ্রিলে। বাকি পাঁচটি জাহাজ ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে সরবরাহ করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালে মারওয়ান শিপিংয়ের জন্য একটি জাহাজ রপ্তানি করেছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন। সেই সফল রপ্তানির সূত্র ধরেই মারওয়ান শিপিং নতুন এই চুক্তিতে আগ্রহ দেখায়।
রপ্তানির পাশাপাশি আগামী মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিএ) দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ 'এমভি রুপসা' ও 'এমভি সুগন্ধা' সরবরাহ করবে ওয়েস্টার্ন মেরিন।
ওয়েস্টার্ন মেরিন এখন পর্যন্ত ১১টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করেছে, যার মোট মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের গ্রাহকদের জন্য কনটেইনার জাহাজ, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ও টাগবোটসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০টি জলযান তৈরি করেছে কোম্পানিটি।
তবে করোনা মহামারির কারণে ২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি থমকে যায়। ২০২০ সালে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ রপ্তানি করলেও গত চার বছরে কোনো বড় ধরনের রপ্তানি চুক্তি পায়নি তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে কোনো জাহাজ রপ্তানি হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের আনন্দ শিপইয়ার্ড ডেনমার্কে একটি জাহাজ রপ্তানি করে।
২০০০ সালে চট্টগ্রামে ১৫ উদ্যোক্তার হাত ধরে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। গত দুই দশকে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ১৫০টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্গো জাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাল্টিপারপাস আইস-ক্লাস ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফট, অফশোর পেট্রোল ভেসেল, টাগবোট, মাছ ধরার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার ক্যারিয়ার।