ফেরত পাঠানোর অনুরোধের মধ্যেই শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত । গত আগস্টে দেশজুড়ে বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে ভারতে আসার পর থেকেই তিনি দিল্লির একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। ঢাকার তরফ থেকে তার প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোর মধ্যেই ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্টরা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের সুবিধার্থেই তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে, তা নাকচ করে তারা জানান, ভারতে শরণার্থী বা আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।
এই ভিসা নবায়নের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে হয়েছে এবং স্থানীয় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হয়েছে।
৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করে ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। এরপর থেকে তিনি দিল্লির একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২৩ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠি (ভারবাল নোট) পাঠিয়েছে।
এদিকে, ভারত ভিসার মেয়াদ বাড়ালেও বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাসহ আরও ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে। অভিযোগ রয়েছে, জুলাইয়ের বিক্ষোভে হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনায় তারা জড়িত।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, 'গুমের ঘটনায় জড়িত ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, আর জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭৫ জনের, যার মধ্যে শেখ হাসিনারও পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।'
একইসঙ্গে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ট্রাইব্যুনাল পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আরও ১১ জনকে আদালতে হাজির করতে হবে।
একই দিনে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএলএম ফজলুর রহমান জানান, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসের হাতে ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্তের অংশ হিসেবে কমিশন ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। তবে এর জন্য বাংলাদেশের সরকারের অনুমতি প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের প্রত্যর্পণের অনুরোধ গ্রহণের কথা নিশ্চিত করলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অতীতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ তার নিজের উপর নির্ভরশীল। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়স্বাল গত বছর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, 'প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আমাদের কাছে তার পরিকল্পনার কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। এটি সম্পূর্ণ তার উপর নির্ভরশীল।'