যেভাবে শিবলীর মেয়াদে দুর্বল করা হয় পুঁজিবাজারকে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/06/p_1-market-weakness-during-shibli-era-2020-2024-copy.jpg)
দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেনের মধ্যস্থতাকারীরা (ইন্টারমিডিয়ারি) টিকে থাকার সংগ্রাম করছে। টার্নওভার কম হওয়ায় ২০২৪ সালে অন্তত ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ সংস্থা লোকসান দিয়েছে, এতে তাদের ট্রেডিং সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় পুঁজিবাজারও দুর্বল হয়েছে।
পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণই হলো মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজ সংস্থার আয়ের একটি প্রধান উৎস; যা অব্যাহতভাবে কমতে থাকে ২০২২ সালে থেকে— শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পরে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে ২০২৩ সালে অন্তত ৮০ শতাংশ ইন্টারমিডিয়ারির মুনাফা ব্যাপকভাবে কমে যায়। দৈনিক টার্নওভার ১ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসে ৫০০ কোটি টাকায়। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট আরও গভীরতর হওয়াকেই যা তুলে ধরে।
নিম্ন এই টার্নওভার অব্যাহত থাকে ২০২৪ সালেও, বেশিরভাগ ইন্টারমিডিয়ারি এতে লোকসানে পড়ে, অনেকে এমনকী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেও সমস্যার মধ্যে পড়ে।
লোকসান দেওয়া ব্রোকারেজ সংস্থা ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো— যারা নিজেদের পোর্টফোলিওর মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে— তারা এখন বিনিয়োগের সক্ষমতা হারিয়েছে। যার ফলে আরও দুর্বল হয়েছে পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স।
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শিবলী চেয়ারম্যান থাকার সময়ে, ৫০টি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে – প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার – সর্বোচ্চ পরিমাণ তহবিল পুঁজিবাজার থেকে ওঠানো হলেও, তা সার্বিক সূচককে চাঙ্গা করতে পারেনি। কারণ আর্থিকভাবে দুর্বল কোম্পানিগুলোকে তহবিল উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যার ফলে ক্ষতি হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
দুর্বল আর্থিক পারফরম্যান্সের কারণে অন্তত ২২টি আইপিও'র বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিভিউ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বোর্ড, তা সত্ত্বেও শিবলীর নেতৃত্বে বিএসইসি এর সবগুলোর অনুমোদন দেয়। অর্থাৎ, প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্বেগকে আমলেই নেওয়া হয়নি।
শিবলীর সময়ে পুঁজিবাজারে আসা নতুন কোম্পানিগুলো— অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান রাখার ক্ষেত্রে যেমন উন্নতি করতে পারেনি, তেমনিভাবে আরও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেও ব্যর্থ হয়েছে। বরং, পুঁজিবাজারের আর্থিক স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়, এবং ব্রোকারদেরও সংকটে ফেলে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে — সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কাতার, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও চীন – এই ১১ দেশে ১৭টি রোড শো'র আয়োজন করেন শিবলী। তবে এসব উদ্যোগ কোনো ফল আনেনি, বরং ফ্লোরপ্রাইস নীতি, সুশাসনের অভাব ও দুর্বল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার কারণে— তার সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে কমে যায়।
২০২৪ সালের শেষে মোট টার্নওভারের মধ্যে বিদেশিদের লেনদেন ১ শতাংশেরও নিচে নেমে আসে। ২০২০ সালে শিবলী যখন দায়িত্ব নেন, তখন এটি ছিল ৩ শতাংশের উপরে। একইভাবে ২০২৪ সালের শেষে জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত (মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি) ৬.৬ শতাংশে নামে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। ডিএসই'র তথ্যমতে, ২০২০ সালে এটি ১৮ শতাংশের বেশি ছিল।
এদিকে বাজারে ২৫০টি ব্রোকারেজ সংস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও— শিবলী আরও ৫৯টি ব্রোকারেজকে লাইসেন্স দেন তার মেয়াদকালে। এসব অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
তবে নতুন লাইসেন্স দেওয়ার পরেও আরো বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করা যায়নি। বরং শেয়ারদরে ফ্লোরপ্রাইসের কারণে তহবিলের ক্ষয় হতে থাকায়— দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রতিবছরই কমতে থাকে।
কোনো কোম্পানির দর সর্বনিম্ন কত টাকায় লেনদেন করা যাবে— সেই সীমা বেঁধে দেয় ফ্লোর প্রাইস। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শিবলীর অধীনে বিএসইসি এটি আরোপ করেছিল, যা ১৮ মাস পরে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বেশিরভাগ শেয়ারের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রত্যাহার করা হয়।
শেয়ারদরে ওঠানামার ওপর এই ধরনের বাধার কারণে বাজারে শেয়ারের বেচাকেনার কার্যক্রম বা ট্রেডিং উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে দৈনিক লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকার উপরে ছিল— তা প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় নামে। এতে খুচরা বিনিয়োগকারী ও বাজারের মধ্যস্থতাকারীরা (ব্রোকাররা) আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
শিবলীর সময়ে বিও একাউন্টের (বেনিফিশিয়ারি ওনার) সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ কমে যায়। দলে দলে বিনিয়োগকারীর বাজার ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিফলন ছিল এই ঘটনা। ডিএসই'র তথ্যমতে, ২০১৯ সালে মোট বিও একাউন্টের সংখ্যা যেখানে ছিল ২৫.৭ লাখ, তা ২০২০ সালের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে— ২০২৪ সালের শেষে ১৬.৮ লাখে নামে।
শিবলী চেয়ারম্যান থাকার সময়ে, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীও বাজারে প্রবেশ করেননি। উল্টো প্রায় ৯০০ বিদেশী বিনিয়োগকারী চলে গেছেন। ডিএসই বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৭৯— যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে ২ হাজার ৫৯৯- এ নেমে এসেছে।
ডিএসই'র মতে, ২০২৪ সালে দেশের পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স ছিল সংকটগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ। শ্রীলঙ্কার প্রধান মূল্যসূচক ওই বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়লেও – বাংলাদেশের প্রধান সূচক প্রায় ১৬ শতাংশ কমে।
এই অঞ্চলে বাজার আকারের তুলনায় বাংলাদেশে সর্বাধিক সংখ্যক বাজার লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী থাকা সত্ত্বেও, ২০২৪ সালের শেষে জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন বা মাত্র ৬.৬ শতাংশ।
ডিএসই এবং সিএসই (চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ)- মিলিয়ে বাজার মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজ বা ইন্টারমিডিয়ারির সংখ্যা ছিল মোট ৫৮৯। সে তুলনায়, পাকিস্তানে ২৪০টি ইন্টারমিডিয়ারি সংস্থা থাকলেও— দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ভিয়েতনাম জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত ৪৫ শতাংশ অর্জন করে মাত্র ১১৭টি ইন্টারমিডিয়ারি নিয়ে। ইন্দোনেশিয়া ১৯৫টি মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজ নিয়ে ৫৩.৯ শতাংশের মতো মূলধনের অনুপাত অর্জন করেছে।
এই অঞ্চলে জিডিপিতে সর্বোচ্চ বাজার মূলধনের অনুপাত ১৩৯ শতাংশ হচ্ছে ভারতের। দেশটির পুঁজিবাজারে লেনদেনের মধ্যস্ততাকারী ব্রোকারেজ রয়েছে ৫ হাজার ১৬৯টি।
এদিকে পুঁজিবাজারের বাজে পারফরম্যান্স, স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাজার কারসাজিতে সহায়তা করা এবং দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তহবিল সংগ্রহের অনুমতি দেওয়ার মতো বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ থাকার পরেও – গত বছরের এপ্রিলে শিবলী রুবাইয়াতের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম মেয়াদ শেষ হলে— তা নতুন করে আরও চার বছরের জন্য বাড়ানো হয়।
তবে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন শিবলী।
ডিএসই'র চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, সংকটকালে বিশ্বের অনেক দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতি ও ব্যাংকখাতকে সহায়তা করে থাকে। যেমন ঋণকে ইক্যুইটিতে রূপান্তর করে। কিন্তু বাংলাদেশ গত দুই বছর ধরে ফ্লোর প্রাইস নীতির মাধ্যমে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, পুঁজিবাজারকে দুর্বল করা হয়েছে। এতে জিডিপিতে বাজারের অবদানও হ্রাস পেয়েছে।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেই সুশাসনের অভাবসহ— নিম্ন মানের আইপিও'র অনুমোদন দেওয়ার ফলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয় বলে জানান মোমিনুল। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্রোকারেজ সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।
ডিএসই'র চেয়ারম্যান বলেন, বাজারের লেনদেনের মধ্যস্ততাকারীরা আর্থিকভাবে দুর্বল থাকলে— পুঁজিবাজার কখনোই গতিশীল হতে পারবে না।
মধ্যস্ততাকারী ব্রোকারেজ যেভাবে লোকসানে পড়লো
ব্র্যাক ব্যাংকের একটি সহযোগী সংস্থা— ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ ডিএসই'র তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান, ২০২৩ সালে যাদের বাজার হিস্যা ছিল ৩.৫৪ শতাংশ। কিন্তু, ওই বছর তাদের নিট বা প্রকৃত মুনাফা ৪৭ শতাংশ কমে।
২০২২ সাল থেকেই মুনাফার পতন হচ্ছিল ব্রোকারেজ সংস্থাটির, ওই বছরে মুনাফা ৭০ শতাংশ কমে নেমে আসে ২৫.৭ কোটি টাকায়। যা কমতে কমতে ২০২৩ সালের শেষে ৪.১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগের ৫১ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা থাকা প্রতিষ্ঠানটির— বৈদেশিক ব্যবসার টার্নওভারের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ কমেছে। যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ক্ষয়কেই তুলে ধরে।
প্রতিষ্ঠানটি এখনও তাদের গত বছরের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেনি। তবে ২০২৪ সালেই লোকসানে পড়ে যায় ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ।
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ- এর পরিচালক সাইফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, নিম্ন টার্নওভারের কারণে পর পর দুই বছর ধরে মুনাফা কমার পর— ২০২৪ সালে এসে আমাদের ব্রোকারেজ লোকসানে পড়েছে।
সাইফুল ইসলাম ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি, তিনি আরও বলেন, টানা দুই বছর ধরে মুনাফার ব্যাপক পতন দেখার পরে ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ হাউস ২০২৪ সালে লোকসান দিয়েছে।
অন্যদিকে, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ সংস্থা, যারা ব্যাংক বা ব্যাংক-বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়ক সংস্থা হিসাবে কাজ করে, তারা লাভজনক রয়ে গেছে। তবে তাদের আয় মূলত ব্রোকারেজ পরিচালনার পরিবর্তে অন্যান্য কার্যক্রম থেকে আসে বলে জানান তিনি।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "টার্নওভার থেকে কমিশন আয় বাজারের ইন্টারমিডিয়ারি বা মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজদের মূল ব্যবসা হলেও—- টিকে থাকার জন্য তারা এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা হওয়া তহবিল থেকে সুদের আয় এবং বিনিয়োগ থেকে হওয়া আয়ের ওপর নির্ভর করছে।"
সাইফুলের মতে, পুঁজিবাজারের দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা টার্নওভার, এই পরিমাণ লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজের লাভজনক থাকা সম্ভব নয়। এখানে মূল সমস্যা হলো— বাজারের আকারের তুলনায় বাজারের মধ্যস্থতাকারী এখন অত্যধিক।
"ইন্টারমিডিয়ারিগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য আগের থেকে দুর্বল হওয়া পড়ায়— তারা সক্রিয়ভাবে বাজার লেনদেনে অংশ নিতে পারছে না। এতে পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্সের আরও অবনতি হচ্ছে"- বলছিলেন তিনি।
এছাড়া টার্নওভারের ওপর কর, যা আগাম দিতে হয়– সেটিও একটি সমস্যা বলে উল্লেখ করেন সাইফুল। তার মতে, "এতে ইন্টারমিডিয়ারিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে, কারণ লোকসান দিলেও— তাদের এই ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।"
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রতি ১০০ টাকা লেনদেনে ব্রোকারেজ সংস্থা ২৫ পয়সা চার্জ করতে পারে। কিন্তু, প্রতি ১০০ টাকা লেনদেনের জন্য তাদের ০.০৫ শতাংশ আগাম কর দিতে হয়। তার সঙ্গে ডিএসইকে দেওয়া লেনদেনের চার্জ ও ২৭.৫ শতাংশ কর্পোরেট করও রয়েছে। সবমিলিয়ে কর প্রদানের পর লেনদেনপ্রতি ব্রোকারেজ কমিশন কমে দাঁড়ায় ১৫ পয়সায়।
লোকসানের মুখে থাকা ব্রোকারেজ ফার্মগুলোকে এখনও টার্নওভারের ওপর কর দিতে হয় উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, টার্নওভারের পরিমাণ যখন কমে তখন এটি প্রকৃত করহারকে বাড়িয়ে দেয়, কারণ পরিচালন ব্যয় স্থির থাকে। কম টার্নওভারের কারণে আমার ফার্ম ৬০ পর্যন্ত প্রকৃত করহারের চাপ অনুভব করেছে।
মধ্যস্থতাকারীদের সুরক্ষার জন্য সরকারের সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান না করায়— তিনি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেন, "এর বদলে তারা নিম্নমানের আইপিও'র অনুমোদন এবং নতুন ব্রোকারেজ লাইসেন্স দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।"
অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ সংস্থাগুলো 'নেগেটিভ ইক্যুইটিতে' রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাইসেন্স হারানোর ভয়ে এটা নিজেদের ব্যালান্স শিটে তাঁরা দেখাচ্ছে না। "তারা এখন নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছে। কিন্তু যদি তাদের যথাযথ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়, তাহলে বেশিরভাগই লস করবে।"
তবে প্যারেন্ট কোম্পানি থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ায় — প্রাতিষ্ঠানিক ইন্টারমিডিয়ারিগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে বলে জানান সাইফুল।
বিএলআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ আহমেদ ইমন জানান, ২০২৩ সালে মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমার পরে— ২০২৪ সালে তার প্রতিষ্ঠানও লোকসান দিয়েছে।
ইমন ডিএসই'র একজন পরিচালকও, তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস নীতির কারণে গত দুই বছর ধরে টার্নওভার কম হওয়ায়—-২০২৪ সালে বেশিরভাগ লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী ব্রোকারেজ সংস্থাই লোকসানের শিকার হয়েছে। শিবলীর সময়ে ৫৯টি নতুন লাইসেন্স দেওয়া হলেও, বর্তমানে এসব ব্রোকারেজের কোনোটিই চালু নেই।
বিধিমালা অনুযায়ী, নতুন ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (টিআরইসি) ধারীদের এটি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ব্যবসা শুরু করতে হবে, তবে তারা এই শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলেও— তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে ব্রোকারেজ কমিশনের আয় অনেকাংশে কমে যাওয়ার পরেও— ২০২৩ সালে আইডিএলসি সিকিউরিটিজের নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশের মতো সামান্য হারে কমেছে। এর পেছনে অবদান রেখেছে তাদের অন্যান্য আয়ের উৎস।
ওই বছরে তাদের ব্রোকারেজ কমিশন বাবদ আয় কমে ৪৪ শতাংশ, এই অবস্থায়, বেশিরভাগ আয় আসে সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ থেকে।
আইডিএলসির আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, সিকিউরিটিজে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে ১২৬ কোটি টাকা, যার সাহায্যে তারা ব্রোকারেজ কমিশনের আয় ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার ধাক্কা সামাল দিতে পেরেছে।