কর্পোরেট বাংলাদেশ: দেশের স্বাধীনতাই যার প্রাণশক্তি
আজকের কর্পোরেট বাংলাদেশ মূলত গড়ে উঠেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাত বাংলাদেশের জনগণের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণকারী ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বেসরকারি খাত বর্তমানে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। বিস্তৃত উৎপাদন খাতের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান উল্লেখ করেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় একটি উদ্যোক্তা বিপ্লবেরও জন্ম দিয়েছে।
আরেক অর্থনীতিবিদ ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটি ধ্বংসস্তূপ পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যে মানুষের মধ্যে উদ্যোক্তা বোধ জাগিয়ে 'নিয়তিবাদী মানসিকতার মানুষকে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জনগোষ্ঠীতে' রূপান্তরিত করেছে দেশের স্বাধীনতা।
স্ব-নির্মিত ব্যবসায়ী ফজলুর রহমানও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে পাওয়া শক্তি তাকে একজন কারখানার মালিক হিসেবে গড়ে তুলে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা আমাদের বাজারে শাসন করে। স্বাধীনতার আগে আমরা নিজেরা ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখতে সাহস করিনি," তিনি উল্লেখ করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকার গেন্ডারিয়ায় একটি ছোট প্লটে সরিষার তেলের মিল চালু করেন তিনি।
৫০ হাজার টাকা মূলধন এবং ২০-২৫ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করা একটি ছোট উদ্যোগই বর্তমানে সিটি গ্রুপের বহু বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। 'তীর' ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেল, চিনি, ময়দা, শিপইয়ার্ড, চা-এস্টেট, ইকোনমিক জোন এবং আর্থিক পরিষেবাসহ ৩৫টিরও বেশি বিশাল ব্যবসা রয়েছে এই গ্রুপের অধীনে।
পাঁচ দশকের দীর্ঘ ব্যবসায়িক কর্মজীবনে তিনি এক লাখেরও বেশি লোকের উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছেন। বার্ষিক ২৫ হাজার কোটি আয় করা সিটি গ্রুপের কারখানাগুলোতে বর্তমানে ১৫ হাজারেরও বেশি স্থায়ী কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন।
সিটি গ্রুপ বর্তমানে ব্র্যান্ডেড ভোগ্যপণ্যের জাতীয় বাজারের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করছে। এমনকি ৫০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজনসহ অনেক পণ্য রপ্তানিও করছে তারা।
ইতোমধ্যেই দেশের জাতীয় কোষাগারে বার্ষিক ২ হাজার পাঁচশো কোটি টাকা যোগ করা গ্রুপটি তাদের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে, নিজস্ব ইকোনোমিক জোনে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ৬টি নতুন কারখানা খোলার জন্য কাজ করছে তারা। এসব কারখানায় আরও ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের আশা ব্যক্ত করে গ্রুপটি।
কর্পোরেট বাংলাদেশের উত্থানের গল্পও সিটি গ্রুপের মতোই। বেক্সিমকো, টিকে, কনকর্ড এবং যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের মতো সাহসী উদ্যোক্তারা জাতি গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন।
কোম্পানিগুলোর সূচনা হয়েছিল প্রধানত মূল পণ্যের আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে। দেশের অর্থনীতির পরিপক্কতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধীরে ধীরে পরবর্তী স্তরের শিল্পগুলিতে প্রসারিত হয় এটি। বর্তমানে কোম্পানিগুলো আরও বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায় জড়িত।
চট্টগ্রামের একজন বণিকের ছেলে আবু তৈয়ব এবং আবুল কালাম ১৯৭২ সালে তাদের ব্যবসা শুরু করেন। বাবার খামারের উপার্জন থেকে পাওয়া ২ হাজার টাকার মূলধন নিয়ে শুরু হয় আজকের টিকে গ্রুপের যাত্রা।
ব্যবসার দুই বছরের মধ্যে, দুই ভাই মিলে চট্টগ্রামে তাদের ভোজ্য তেলের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বাজারের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি তারা।
দেশীয় পণ্য উৎপাদন এবং মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের স্বপ্ন দেখা দুই ভাইয়ের হাত ধরেই ভোজ্যতেল, ইস্পাত, বোর্ড, কাগজ, টেক্সটাইল, প্যাকেজিং, বৃক্ষরোপণ, জাহাজ নির্মাণ, সিকিউরিটিজ ট্রেডিং, বীমাসহ ৬০টিরও বেশি ব্যবসায়িক সংস্থার জন্ম দিয়েছে টিকে গ্রুপ। বার্ষিক ২৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার টার্নওভার তৈরি করছে এই গ্রুপ।
টিকে গ্রুপের অপারেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর তারিক আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর পূর্বে আধিপত্য বিস্তারকারী অবাঙালি ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর বিদায়ের ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার ফলেই ব্যবসার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
"নিজের মাটিতে তাদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে স্বাধীনতা," যোগ করেন তিনি।
বেক্সিমকো গ্রুপের গল্পটিও একই ধাঁচের। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশে পাট এবং অন্যান্য কিছু পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে তারা।
বেক্সিমকোর সাম্রাজ্যের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে বৃহৎ টেক্সটাইল ভিলেজ। পৃথিবীবিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারক তার শেয়ারের সিংহভাগ লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ করেছে যা ব্যবহৃত হচ্ছে সিরামিক, ফ্যাশন হাউজ, গণযোগাযোগ মাধ্যম, পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, পাটজাত পণ্য, তথ্য প্রযুক্তি খাত, ব্যাংক, খেলা ধুলা, সৌর শক্তিসহ আরও অনেক ব্যবসায়।
এদিকে ১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু করা যমুনা গ্রুপ এখন বৃহৎ টেক্সটাইল, রাসায়নিক, নির্মাণ, চামড়া, প্রকৌশল, পানীয়, মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপন ব্যবসার মালিক। রাজধানী ঢাকায় উপমহাদেশের বৃহত্তম শপিং মলও তৈরি করেছে তারা।
দেশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে সাহায্য করেনি, বরং পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগগুলোকেও বিকাশের জায়গা দিয়েছে।
১৯৫০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত ইস্পাত উৎপাদনকারী বিএসআরএম গ্রুপ স্বাধীনতার আগে যথাযথ অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবেই কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছিল ব্যবসা। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলিহুসেন বলেন, "স্বাধীনতার পূর্বের দুই দশকে আমাদের ব্যবসা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। এখন আমাদের যা আছে তা মূলত স্বাধীন বাংলাদেশেই সম্ভব হয়েছে।"
মুক্তিযুদ্ধের পর অন্যান্য কল-কারখানার মতো চট্টগ্রামে তাদের স্টিল মিলও জাতীয়করণ করা হয়। গুজরাটি বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা পরিবারের দক্ষতা ও ব্যবসায় নিষ্ঠা এবং চট্টগ্রামের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠাতাদের কাছে মিলটি হস্তান্তর করেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক খাত নিয়ে লড়াই করছিল। সেসময়, অর্থাৎ সত্তরের দশকে ইস্পাতের ব্যবসায় তেমন উন্নতির ছোঁয়া পায়নি বিএসআরএম। কিন্তু এরপরের দশকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তারা।
নব্বইয়ের দশকের আসল টেক-অফ
১৯৯০ এর দশকে দেশে বেসরকারী খাতের নেতৃত্বে প্রবৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করার পর দেশের অর্থনৈতিক খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। "আমাদের ব্যবসা এখন সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে," বলেন আমির আলিহুসেন।
বিএসআরএম গ্রুপ প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার তৈরি করছে। বর্তমানে ৪ হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। এছাড়া, প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগও রয়েছে এই গ্রুপের।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার তালিকায় রয়েছে এমএম ইস্পাহানি, হাবিব গ্রুপ, একে খান গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, রহিম-আফরোজ, স্কয়ার গ্রুপ, পারটেক্স, নাভানা এবং ইসলাম গ্রুপ, এ মোনেম, আবুল খায়ের, বেঙ্গল গ্রুপ, মীর আক্তার এবং পিএইচপি।
এ কে খান গ্রুপের পরিচালক ও ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসায়ী সৃষ্টির পেছনে স্বাধীনতা ছিল সবচেয়ে বড় কারণ।
"স্বাধীনতার আগে, এই ভূখণ্ডের মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবহেলিত ছিল। ব্যবসা করা, লাভজনক ব্যবসার লাইসেন্স পাওয়া, ব্যাংক ঋণ পাওয়া এবং ব্যবসার জন্য সঠিক অবকাঠামো থাকা- সবকিছুই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের পক্ষে।"
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে এবং সবকিছুই এখন বাংলাদেশিদের হাতে।
দেশের অর্থনীতির এই রূপান্তর ছিল দর্শনীয় এক ঘটনা। বাংলাদেশের উদ্যোক্তা, ভোক্তা এবং দক্ষ পেশাদারদের জন্য সুযোগ তৈরির মাধ্যমে বেসরকারি কোম্পানিগুলোই বর্তমানে অর্থনৈতিক ইঞ্জিন চালাচ্ছে।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম বলেন, "স্বাধীনতা এখানে উদ্যোক্তাদের সাহস জুগিয়েছে। বাঙালিরা শুধুমাত্র অন্যদের জন্য কাজ করতে পারে, এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে এটি।"
পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের ছেলে এবং কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, তার বাবা ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১ হাজার ৪৮৩ টাকার মূলধন নিয়ে একটি আমদানি ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
আমদানি ব্যবসার আকাঙ্খা পিএইচপিকে অত্যাধুনিক কাঁচের কারখানা, শিপইয়ার্ড, গাড়ি অ্যাসেম্বলি এবং স্বয়ংক্রিয় ম্যানুফেকচারিংসহ অন্যান্য অনেক পণ্যে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এছাড়া, মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ, নাসির গ্রুপ এবং ইউনাইটেড গ্রুপসহ আজকের বৃহৎ কোম্পানিগুলো স্বাধীনতার প্রথম দশকের মাঝামাঝিতে যাত্রা শুরু করে।
জনশক্তি রপ্তানি, ক্রমবর্ধমান কৃষি উৎপাদন, উন্নয়ন প্রকল্প এবং স্থানীয় চাকরির সুযোগ বাড়তে থাকায় আশির দশকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। পরবর্তী দশকগুলোতে এই প্রবণতা বাড়তে থাকে আরও বহুগুণ।
তবে, দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসে আশির দশকে পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে। স্বল্পমূল্যে শ্রমের প্রাপ্যতা, সরকারি সহায়তা এবং রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে শত শত নতুন উদ্যোক্তার উত্থান আরেকটি নতুন খাতের সূচনা করে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক সবুজ পোশাক কারখানার আবাসস্থল, এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
ফার্মাসিউটিক্যালস
স্বাধীনতার আগে এই খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাদের যাত্রা শুরু করলেও বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উত্থান এখনও অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়।
দেশে এই খাতে সর্ববৃহৎ কোম্পানি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ১৯৫৮ সালে পাবনায় একটি ছোট প্ল্যান্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপ ওষুধ, এফএমসিজি পণ্য, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবা, মিডিয়াসহ অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
আশির দশকে ব্যবসা সহায়ক ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প নীতির মাধ্যমে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সেরাটি প্রকাশ করতে পেরেছিল। স্কয়ার এবং বেক্সিমকো-এর মতো স্থানীয় কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি ১৩০টিরও বেশি দেশে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে।
১৯৮০, ১৯৯০ এবং তার পরবর্তী সময়ে, বিদ্যমান এবং শত শত নতুন উদ্যোক্তারা লেদার, প্লাস্টিক, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং এই ধরনের পণ্য রপ্তানি বা আমদানির লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
২০০০-এর দশকে, দেশের উদ্যোক্তারা পরিষেবা শিল্পে উন্নতির পাশাপাশি আধুনিক এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ পর্যায়ের উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে।
বিদ্যমান শিল্প, যেমন পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, শুধুমাত্র তাদের উৎপাদনের উৎকর্ষের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করেছে এবং স্থানীয় মূল্য সংযোজনের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
ইলেকট্রনিক্স, হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস, বাইক
ওয়ালটনসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিগুলি ২০১০ এর দশকে এক নতুন খানের সূচনা করে। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি কমিয়ে নিজের দেশেই তা উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে স্থানীয় কোম্পানিগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে আন্তর্জাতিক বাজার জয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস, সিমেন্ট ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স আমদানি এখন প্রায় অতীতের বিষয়।
এমনকি, কয়েক দশক ধরে টু হুইলার অর্থাৎ মোটরবাইক আমদানির পর দেশেই তৈরি হচ্ছে রানারের মানসম্পন্ন পণ্য। রানার ইতোমধ্যেই তাদের মোটরবাইক রপ্তানি শুরু করেছে।
ক্রমবর্ধমান গ্রাহক বেস এবং দ্রুত উন্নয়নশীল সড়ক অবকাঠামো এই দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের আকৃষ্ট করছে।
এছাড়াও, দেশের প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভার প্রতিফলন দেখিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থনৈতিক সেবা
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি বিকাশ সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো জাপানি সফটব্যাঙ্ক-এর নেতৃত্বাধীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে। এছাড়া, পাঠাও এবং শপআপের মতো স্টার্টআপগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হচ্ছে।
এমনকি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ডেটাসফট জাপানে স্মার্ট-হোম ট্রান্সফরমেশনে কাজ করছে।
পেশাদার এবং উদ্যোক্তা দক্ষতার সংমিশ্রণে অনেক বাংলাদেশি নির্বাহী বিদেশি সংস্থাগুলোকে ছাপিয়ে দেশিয় বাজারের দখল নিতে সক্ষম হয়। ইম্পেরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে শুরু করে আজকের অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পর্যন্ত; অন্যদিকে ফাইজার বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রেনাটা পর্যন্ত দেশিয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোরই রাজত্ব এখন বাংলাদেশের বাজারে।
- মূল প্রতিবেদন: Freedom fuels rise of corporate Bangladesh
- ভাষান্তর: সাদিয়া আফরিন শায়লা