ধামাকার গ্রাহকদের ৮৪ কোটি টাকা নিজ অ্যাকাউন্টে সরিয়েছেন এমডি চিশতি
বিতর্কিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম ধামাকা শপিংয়ে পণ্য অর্ডার করে গ্রাহকদের অগ্রিম পরিশোধ করা অর্থ থেকে ৮৪ কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতি।
গ্রাহকদের পরিশোধিত টাকা থেকে নিজের মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া ছাড়াও সফটওয়্যার কেনার নামে আরও ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
গত ২৭ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ধামাকার গ্রাহকদের পরিশোধ করা অর্থ লুটপাট করেছেন ধামাকার শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনরা। মার্চেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পণ্য সরবরাহ ছাড়াই শুধু কাগুজে লেনদেন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।
এসব কাজে ধামাকা শপিংয়ের চীফ অপারেটিং অফিসার-সিওও মো. সিরাজুল ইসলাম ও তার আপন ভাই মো. সেলিম হোসেনসহ আরও অনেকেই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। পণ্যের পরিবর্তে অর্থ হস্তান্তরকারী অসাধু বিক্রেতা এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের আইনী প্রক্রিয়ায় আনা গেলে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন সহজ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইন্সপেকশনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ৭৩৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। আর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করেছে ৫৫৭ কোটি টাকা।
ধামাকা শপিংয়ের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৩০৩ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের পাওনা ১৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের মোট পাওনা ৪৭০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে এই বিপুল পরিমাণ দেনা থাকলেও ধামাকা শপিংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ৪৫.২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা দেনার বিপরীতে ধামাকার রয়েছে মাত্র ৯ পয়সা।
ধামাকা শপিং এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির রেজিস্ট্রার্ড গ্রাহক ছিল দুই লাখেরও বেশি। প্রায় ১১ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোম্পানিটিতে পণ্য সরবরাহ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ধামাকা শপিং ৭২৪ কোটি টাকার পণ্য গ্রাহকদের কাছে ৪০২ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে। এতে ৩২২ কোটি টাকার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, গ্রাহক ও বিক্রেতাদের পাওনা টাকার একটি অংশ এমডি জসিম উদ্দীন চিশতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়া ও সফটওয়্যার কেনার নামে স্থানান্তর করেছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে এক গ্রাহকের দায়ের করা প্রতারণা মামলায় ধামাকা শপিং এর সিওও সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও জসিম উদ্দিন চিশতি বিদেশে পলাতক রয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
যেসব মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান ধামাকাকে পণ্য সরবরাহ করেছে, তার মধ্যে দু'টি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পণ্যের অর্ডার বাবদ ধামাকা শপিং থেকে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে গ্রাহকদের নগদ ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ, কাগুজে ক্রয়-বিক্রয় হলেও কোন পন্য বিনিময় হয়নি।
'কিছু সংখ্যক গ্রাহক দফায় দফায় বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে অর্থ পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিং এর দেওয়া ডিসকাউন্ট সুবিধা ভোগ করেছেন। এই সুবিধাভোগীদের সাথে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে'- যোগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই সুবিধাভোগী গ্রাহকদের একজন সেলিম হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তিনি ধামাকা শপিং এর সিওও সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই।
ধামাকা শপিং মূলত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড এর ই-কমার্স ব্যবসা। আর ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম মাইক্রোট্রেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস, মাইক্রোট্রেড ফুড এন্ড বেভারেজ ও মাইক্রোট্রেড আইসিএক্স লি.।