২০২২ অর্থবছরে বেড়েছে বৈদেশিক অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি
কোভিডের টিকা ক্রয়ে ঋণ এবং বাজেট সহায়তার প্রভাবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বেড়েছে।
গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৮৩ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ের পরিমাণও বেড়েছে । গত অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় এ বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থছাড় দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৪.৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলারের।
অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক সহযোগীরা ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থছাড় দেয়। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৪.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, কোভিডের বাজেট সহায়তা এবং টিকা কেনার উদ্দেশ্যে পাওয়া ঋণের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বেড়েছে।
তাছাড়া, উন্নয়ন প্রকল্পে যে ঋণ দেওয়া হয়, তার ছাড় দেওয়া হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তিতে। বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত হলে অর্থছাড়ও দ্রুত হয়। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অর্থছাড়ও বিলম্বিত হয়।
কিন্ত টিকা কেনার ঋণ এবং বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি হওয়ার বা প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ছাড় হয়। চলতি অর্থবছরের টিকা ক্রয় এবং বাজেট সহায়তা বাবদ ইতোমধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি ছাড় হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিডের অর্থায়নের কারণে প্রতিশ্রুতি ও অর্থ বেড়েছে। কোভিডে রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সরকারের এখন অর্থের প্রয়োজন। এ কারণেই সরকারের এখন বেশি বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে। আর বাজেট সহায়তার অর্থছাড় হতে সময় লাগেনা।
তবে, প্রকল্প সহায়তার অর্থ সেভাবে বাড়ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দের মাত্র ৩৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা গতি কম থাকার কারণে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকে। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পর ঢাকা- আশুলিয়া এক্সেপ্রেসওয়ে প্রকল্পে দেশটির সঙ্গে সরকারে ঋণ চুক্তি হয়েছে। এ কারণে চীন থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে। এই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ৮১৯ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৫১৫ এবং বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অন্যদিকে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে অর্থছাড় দিয়েছে এডিবি। ম্যানিলা ভিত্তিক এই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে।
এদিকে আলোচ্য সময়ে সরকারের ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের হারও বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার আসল ও সুদ বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের ১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধন করেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে পরিশোধের হার ছিল ৯০০ মিলিয়ন ডলার।