ব্যবসার পুনরুদ্ধার বড় করদাতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় বাড়িয়েছে
মহামারির আঘাতের ফলে সৃষ্ট লোকসান কাটিয়ে গতি ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। তার সুবাদে চলতি অর্থবছরে সিগারেট থেকে ব্যাংক, ফার্মা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, পানীয়, পানি সরবরাহ—মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) প্রদানকারী (লার্জ ট্যাক্সপেয়ার্স ইউনিট বা এলটিইউ) শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে সাতটি খাত থেকেই ভ্যাট আদায় বেড়েছে ২০ শতাংশ।
তবে শীর্ষ অপর তিন ভ্যাট প্রদানকারী খাত থেকে আদায় কমেছে। ভ্যাট পরিশোধে নেতিবাচক অবস্থানে থাকা খাত তিনটি হলো মোবাইল টেলিকম অপারেটর, সাবান ও সিমেন্ট খাত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এলটিইউ-ভ্যাট অফিস সূত্র জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ অফিসের তালিকাভুক্ত ১১০টি কোম্পানির কাছ থেকে সব মিলিয়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। যদিও ১১০টি বড় কোম্পানির মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠান থেকেই আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় না বেড়ে উল্টো কমেছে।
তবে এলটিইউয়ের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে—যেগুলো থেকে মোট ভ্যাটের ৫০ শতাংশ আসে—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
ভ্যাট আকারে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল এনবিআর। আর চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
ভ্যাট প্রদানের তালিকায় ১৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্যাস খাত। এছাড়া ব্যাংক খাত থেকে ২৫ শতাংশ, সিগারেট থেকে ১৬ শতাংশ, ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে ১১ শতাংশ, বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ, পানি সরবরাহ থেকে ৩ শতাংশ এবং বেভারেজ থেকে এসেছে ২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাশ কম। সাবান খাতের একক কোম্পানি হিসেবে ইউনিলিভারের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় কমেছে ১৩ শতাংশ আর সিমেন্ট খাতের ৯টি কোম্পানির কাছ থেকে সম্মিলিতভাবে কমেছে ১০ শতাংশ।
এলটিইউ-ভ্যাটের কমিশনার ওয়াহিদা চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'টেলিকম, সিমেন্ট খাতের ভ্যাট আদায় কমার বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা ও পরিদর্শন আরও বাড়ানো হবে।'
এলটিইউ-ভ্যাট অফিসের সূত্রমতে, অর্ধেকের বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট খাত থেকে। আদায়ের দিক থেকে তারপর ছিল মোবাইল ফোন অপারেটর, ব্যাংক, ওষুধ, গ্যাস ও অন্যান্য খাত।
টেলিকম অপারেটরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয় গ্রামীণফোনের কাছ থেকে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে গ্রামীনফোনের ভ্যাট কমেছে ৪ শতাংশ আর রবির ৩ শতাংশ। তবে বাংলালিংকের ভ্যাট বেড়েছে ৪ শতাংশ।
গ্রামীণফোনের আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে তাদের আয় বেড়েছে, কিন্তু মুনাফা কমেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, গ্রামীণফোন লিমিটেডের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান মোঃ হাসান টিবিএস'কে বলেন, 'জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে অমীমাংসিত কিছু বিরোধ সমাধানে ক্রমাগত চেষ্টার অংশ হিসেবে জিপির (গ্রামীণফোন) কাছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কিছু এককালীন অর্থপ্রদানের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বাকি ছিল, সে কারণেই ২০২১-২২ অর্থবছরের দেওয়া ভ্যাটের পরিমাণ বেড়েছে।'
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স চিফ শাহেদুল আলম বলেন, যখন ২০২০ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়, তখন প্রচুর সংখ্যক রবি সিম ইতোমধ্যেই বাজারে ছিল। ফলে সেই সময়ে রবি থেকে ভ্যাট সংগ্রহ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, এনবিআরের আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ এবং আমদানি পর্যায়ে আরোপিত শুল্ক ও অন্যান্য ট্যাক্স সমন্বয়ের কারণে কম সিম বিক্রি হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ভ্যাট প্রদান কমেছে।
অবশ্য তিনি জানান, রবি থেকে ভ্যাট আদায় কমে গেলেও, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয়কর ও শুল্কের সামগ্রিক সংগ্রহ বেড়েছে।
ইউনিলিভার থেকে ভ্যাট আদায় কমে যাওয়ার বিষয়ে এনবিআর সূত্রগুলি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির বিক্রিবাট্টা কমে যায়। এছাড়া, কর রেয়াতের সমন্বয়ও কোম্পানিটির দেওয়া ভ্যাট কমার আরেকটি কারণ।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক টিবিএসকে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সিমেন্ট খাতের সামগ্রিক বিক্রয় ভালো যায়নি। এ কারণেই সেখান থেকে ভ্যাট আদায় কমেছে।